রক্তিম মিত্র
জেলায় জেলায় যেন ঢল নেমেছে। মহানগরের ছবিটাও আলাদা নয়। লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে। সবাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে নাম লেখাতে চান।
এই ছবিটা তুলে ধরে মিডিয়া যেন গর্বের সীমা নেই। নারী ক্ষমতায়নের পথে এ নাকি দারুণ এক দৃষ্টান্ত। নবান্ন থেকে ঘটা করে তুলে ধরা হচ্ছে পরিসংখ্যান। কত লক্ষ লক্ষ নারী এই ফর্ম ফিলাপ করছেন।
আসলে, কোনটা গর্বের, কোনটা লজ্জার–এই সাধারণ বোধটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে। যেটা লজ্জার বিজ্ঞাপন হতে পারে, সেটাকে গর্বের বিজ্ঞাপন হিসেবে তুলে ধরার কী হাস্যকর চেষ্টা।
আমাদের রাজ্যে নাকি শিল্পের জোয়ার বইছে। আমাদের রাজ্য নাকি কর্মসংস্থানে এক নম্বর। গ্রামীণ জনজীবনের মান নাকি দারুণ উন্নত হয়েছে। ঘটা করে এই সব বিজ্ঞাপন দেখা যায় হোর্ডিংয়ে, ফ্লেক্সে, টিভি বা কাগজের বিজ্ঞাপনে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে অন্যান্য মন্ত্রীরাও দিনে সাড়ে সতেরোবার এমন দাবি করে থাকেন।
যদি তাই হয়, তাহলে মাত্র পাঁচশো টাকার জন্য এই লাইন কেন? যদি গ্রামের মহিলারা এতটাই স্বয়ম্ভর হয়ে থাকেন, তাহলে সামান্য কটা টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে কেন? এই সহজ প্রশ্নটাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তার বদলে সরকার সবশ্রেণির মেয়েদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, এই ছবিটা তুলে ধরা হচ্ছে। বিকৃত প্রচার কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, এটা তার একটা সার্থক নমুনা।
ভোটের আগে ঘটা করে স্বাস্থ্যসাথীর প্রচার হয়েছিল। যে কোনও জটিল অপারেশনে নাকি পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সাহায্য পাওয়া যাবে। অনেকেই সেই ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ভোট মিটতে না মিটতেই সেই কঙ্কালসার ছবিটা বেরিয়ে এসেছে। কলকাতার বড়সড় হাসপাতাল তো ছেড়ে দিন, জেলার মাঝারিমানের হাসপাতালও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ সরাসরি বলছেন, আমরা স্বাস্থ্যসাথীর স্কিমে নেই। কেউ আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বেড নেই। মোদ্দা কথা, সেই প্রকল্প সুপার ফ্লপ।
এর পরেও মানুষ শিক্ষা নিচ্ছেন না। এরপরেও তাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রকল্পে নাম লেখাচ্ছেন। স্বয়ম্ভর করার বদলে একটু একটু করে তাঁদের ভিখারি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা মানুষ কবে আর বুঝবে? এই প্রকল্প যে বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, এটা সরকারই বা কবে বুঝবে? স্বাস্থ্যসাথী সুপার ফ্লপ হওয়ার পরেও এই জাতীয় প্রকল্প নেওয়াটা ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করার কেউ নেই? না দলে, না ক্যাবিনেটে, না মিডিয়ায়।
চোপ, সরকার চলছে।