বিনা পরীক্ষায় পাস, এরপরেও মিষ্টি বিলি!‌

সম্রাট দত্ত

একসঙ্গে ৭৮ জন নাকি রাজ্যে প্রথম হয়েছে। হ্যাঁ, এটাই মাধ্যমিকে সেরা চমক।
এরপরেও মিস্টি মুখ চলছে। এর পরেও টিভিতে সাক্ষাৎকার চলছে। এরপরেও ঘটা করে রেজাল্ট বের করার প্রেস কনফারেন্স চলছে।

কোনটা গর্বের, আর কোনটা লজ্জার–‌এই ভেদরেখাটা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভোট চলবে। মিছিল চলবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত চলবে। চলবে না শুধু পরীক্ষা। তাহলে নাকি মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। একদিকে সরকার দায় ঝেড়ে ফেলল। অন্যদিকে শিক্ষক সংগঠনগুলিও কী নির্লিপ্ত রইল। বকেয়া ডিএ নিয়ে কত দাবিদাওয়া। অথচ, বকেয়া পরীক্ষা নিয়ে কোনও দাবিদাওয়া নেই। নীরব সমর্থন। পরীক্ষা হলে তো গার্ড দিতে হবে। কয়েকদিনের ভাত ঘুম নষ্ট কে করতে চায়‌!‌ সত্যিই তো, স্মার্টফোন ছাড়া এতক্ষণ গার্ড দেওয়া যায়!‌

madhyamik3

কেরলে তো দিব্যি পরীক্ষা হয়ে গেল। মাস তিনেক আগে সেখানে রেজাল্টও বেরিয়ে গেছে। সেই পরীক্ষার জন্য করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, এমন খবরও নেই। মোদ্দা কথা, রাজ্য সরকার চাইলেই অনায়াসে পরীক্ষা নিতে পারত। দূরে সেন্টার হলে হয়ত সমস্যা হত। কিন্তু নিজেদের স্কুলে পরীক্ষা অনায়াসেই নেওয়া যেত। অন্যান্য ক্লাস বন্ধ। সেক্ষেত্রে একেকটা ঘরে দশজন করে ছাত্র বসানো যেত। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী স্কুল থেকে এক–‌দু কিমির মধ্যেই থাকে। ফলে, তাদের স্কুলে আসতে কোনও সমস্যাই হত না। আরও একটু দূরে হলেও সমস্যা ছিল না। সুন্দর সাইকেল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারত।

এই সামান্য ঝুঁকিটুকুও সরকার নিতে চাইল না। একেবারে গা ঝেড়ে ফেলল। মাছের বাজার খোলা থাকবে। মদের দোকান খোলা থাকবে। রাজনৈতিক সভা, সমিতি হবে। হবে না শুধু পরীক্ষা। নাইনের প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে নাকি মাধ্যমিকের মূল্যায়ন। কত স্কুলে চাপের কাছে নাইনের নম্বর বাড়ানোর জন্য নাছোড়বান্দা চাপ দেওয়া হয়েছে, কত হেডমাস্টারকে অসহায়ভাবে নতুন করে নম্বর বসাতে হয়েছে, সেই হিসেব কি পর্ষদ কর্তাদের কাছে আছে?‌

সত্যিই, কোভিড কতকিছু দেখিয়ে দিয়ে গেল। যারা এখন মিষ্টি বিলি করছে, তারা পরে বুঝবে এই বিনা পরীক্ষায় পাসের ফল কী হতে পারে। বারো লক্ষ ছেলেমেয়ের গায়ে ‘‌কোভিড ব্যাচ’ তকমা লেগে গেল। সত্যিই, অনুপ্রেরণা বড়ই ভয়ঙ্কর জিনিস। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.