অজয় কুমার
অনেকে যেন অবাক হয়ে গেছেন। মুকুল রায় আবার তৃণমূলে!
কিন্তু এমনটাই তো হওয়ার ছিল। আর তার ইঙ্গিতও অনেক আগে থেকেই ছিল। তা সত্ত্বেও কেন যে এত বিস্ময়!
দল ছাড়ার পর ছেড়ে আসা দল সম্পর্কে দু–চার কথা সবাইকেই বলতে হয়। প্রথম প্রথম মুকুল রায়ও বলেছেন। কিন্তু যা জানেন, যা বলতে পারতেন, তার এক শতাংশও বলেননি। একবার শুধু কয়েকটা কাগজ দেখিয়ে ‘বিশ্ববাংলা’ দিয়ে দু একটা দায়সারা গোছের অভিযোগ। এর বাইরে তিনি এমন কী করেছেন যার জন্য তৃণমূলের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারেন?
তিনি বলেছেন, রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। তিনি বলেছেন, শিক্ষায় দলতন্ত্র চলছে। আচ্ছা, এগুলো বলার জন্য বুঝি মুকুল রায় হতে হয়! এগুলো তো চায়ের দোকানে বসে পাড়ার পাঁচুদাও বলতে পারে। তিনি কী এমন গোপন কথা ফঁাস করেছেন?
না, তাঁর তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া মোটেই গট আপ ছিল না। দলে গুরুত্ব কমছিল। ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র তাঁর দিক থেকে অন্যদিকে সরে যাচ্ছিল। বুঝতে পারছিলেন, পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে চলেছে। তাই তখন বেরিয়ে আসা ছাড়া সত্যিই তাঁর কিছুই করার ছিল না। সেইসঙ্গে নিজের সাংগঠনিক ক্ষমতাও দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। লোকসভা ভোট পর্যন্ত সেই সুযোগ পেয়েওছেন। কিছুটা প্রমাণও করেছেন। লোকসভায় বিজেপি যে ফল করেছে, তা প্রত্যাশার অধিক।
কিন্তু এতেই কাল হল। বিজেপি নেতারা ভেবে নিলেন, আমরা ক্ষমতায় এসেই গেছি। তাই ভুলভাল লোকের ওপর নির্ভরতা বাড়ল। যে কাজের জন্য মুকুল রায়দের নেওয়া হয়েছিল, সেই কাজটাই তাঁকে করতে দেওয়া হল না। অন্য লোকেদের মাথায় তুলে নাচা শুরু হয়ে গেল। এতে যে কোনও লোকেরই খারাপ লাগাই স্বাভাবিক। যেভাবে তৃণমূলে কোণঠাসা হচ্ছিলেন, বিজেপিতেও প্রায় একইভাবে কোণঠাসা করার কাজ শুরু হল।
আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। শোনা যায়, গতবছর জুন মাস থেকেই তৃণমূলে ফেরার একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কুণাল ঘোষের সঙ্গে একান্তে বৈঠক হয়েছে। পিকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। আরও এক প্রভাবশালীর সঙ্গে (কে, সেই নামটা উহ্য থাকুক) দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। প্রথম দুটি নাম জোরের সঙ্গে লেখা গেল। কারণ, সেগুলো কোনও জল্পনা নয়। কুণাল ঘোষ নিজে এক মাস আগের এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছিলেন। নাম দুটোও তিনি গোপন করেননি। যাই হোক, তখনই ব্যাপারটা অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
সেই সময় মুকুলকে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ দেওয়া হল। যদিও এই পদের মূ্ল্য কতখানি, সেটা বিচক্ষণ মুকুল রায়ের অজানা নয়। কার্যত অকেজো করে রাখা। সেইসঙ্গে ধরিয়ে দেওয়া হল ইডির চিঠি। নানা কারণে, সেই সময় মুকুলের তৃণমূলে যোগদান করা হয়নি। তারপর বিধানসভা ভোটে দলবদল থেকে শুরু করে প্রার্থীবাছাই, কোথাও তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁকে কৃষ্ণনগর দক্ষিণে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সেই কেন্দ্রে কার্যত বন্দি রাখার চেষ্টা হয়। দেওয়াল লিখনটা পড়তে ভুল হয়নি পোড়খাওয়া মুকুলের। নিজেকে ক্রমশ গুটিয়ে নিলেন। তৃণমূল বিরোধী কথাবার্তা প্রায় বন্ধই করে দিলেন। কারণ, ভোটের পর কী হতে চলেছে, বেশ বুঝতে পারছিলেন।
সবকিছুর যোগফল হল আবার তাঁর তৃণমূলে ফিরে আসা। এটাই হওয়ার ছিল। এতে অবাক হওয়ার কোনও কারণও নেই।