হেমন্ত রায়
আরও এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিল রাজ্য। বিধানসভায় বিলও পাস হয়ে গেল। রাজ্যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লে তাতে আপত্তির কারণ থাকা উচিত নয়। সেদিক থেকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানোই উচিত। কিন্তু যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা অনিয়ম দেখা দিচ্ছে, তাতে সংশয়ও তৈরি হচ্ছে।
প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, বাম জমানায় উচ্চশিক্ষাকে আরও অনেকটাই গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। অন্তত জেলাপিছু একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতেই পারত। সেই আর্থিক সামর্থ্য ছিল। সেই পরিকাঠামো ছিল। সেই প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করতে পারেনি। গ্র্যাজুয়েট হয়েই থেমে থাকতে হয়েছে।
এই সরকার অন্তত সংখ্যার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে। অধিকাংশ জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেভাবে তা পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেইসঙ্গে এমন এমন প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয় করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যাদের শিক্ষামনষ্কতা নিয়ে সংশয় আছে। বিষয়গুলির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, এমন এমন বিষয় আনা হয়েছে, যেগুলি পড়তে প্রচুর খরচ। আর্টসের অধিকাংশ বিষয় তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। কারণ, সেখানে তেমন উপার্জন নেই। ঝুড়ি ঝুড়ি ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি দিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করছে।
সত্যিই কি ঠিকঠাক মান বজায় থাকছে? যোগ্য শিক্ষকদের কি নিয়োগ করা হচ্ছে? যাঁরা এসএসসি পাচ্ছেন না, তাঁরা সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। অর্থাৎ, সরকার যাঁদের স্কুলে পড়ানোর যোগ্য মনে করছে না, তাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন! প্রকাশ্যেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, টাকা ফেলুন, ভর্তি হোন। এমনকী মেডিক্যাল কলেজেও টাকা ফেললেই ডাক্তার হওয়ার হাতছানি। জয়েন্টে র্যাঙ্ক হোক না হোক, তিন লাখের পেছনে হোক, ডিগ্রি জুটে যাবে। আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তো কথাই নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে থার্ড ডিভিশন, এমনকী সেকেন্ড ডিভিশনে উতরে যাওয়া ছেলেও দিব্যি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাচ্ছে। হয় ঘরে বসে থাকছে, নয়ত আট–দশ হাজার মাইনেতে কাজ করছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাকে পড়াতেই বাড়ির লোকের অন্তত ৩০ লাখ খরচ হয়ে গেছে। আরও খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেক ক্ষেত্রে ডিগ্রি কার্যত বিক্রি হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠছে। আগামীদিনে আরও উঠবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যাবে, ছেলে কিছুই শিখল না। এমনকী গ্র্যাজুয়েট হওয়ার বিদ্যেটুকুও অর্জন করেনি। এমন ডজন ডজন স্নাতকোত্তর হয়েই লাভ কী? এবার হয়ত এম ফিল, পিএইচ ডি এগুলোও বিক্রি হবে। মুড়ি, মিছরি কোনও তফাত থাকবে না।
তাই বিধানসভায় হইহই করে বিল পাস করলেই হবে না। সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় গুণমান বজায় রাখছে কিনা, তার একটা তদারকি থাকুক। এবং এই তদারকির দায়িত্ব থাকুক যথার্থ শিক্ষামনষ্ক লোকের হাতেই।