বেড়ানোর আগে একটু জেনে নিন

বেড়াতে যেতে কে না ভালবাসে!‌ কিন্তু গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, পরিকল্পনার অভাব। অথচ, একটু ভাবনা–‌চিন্তা করে গেলে বেনানোর যথার্থ আনন্দ পেতে পারেন। খরচও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে। এমনই কিছু পরামর্শ তুলে ধরলেন সন্দীপ লায়েক।।

মুষ্টিমেয় কিছু লোকজন ছাড়া সকলের কাছেই ভ্রমণের বাজেট একটা বিশাল ভূমিকা পালন করে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই বাজেট অপ্রতুলতা অনেককেই ভ্রমণ এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত করছে, অন্তত আমার তো তাই মনে হয়। আমিও সেই সংখ্যাগুরু লোকজনের মধ্যে পড়ি যাদের ট্যাঁকের জোর খুব বেশি নয়, সময়েরও যথেষ্ট অভাব। অথচ উৎসাহের কোনও ঘাটতি নেই। তাই বলে আমি কিন্তু খুব কম একটা ঘুরিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাজেট সংকোচের কিছু টোটকা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। আপনার কাজে লেগে যেতে পারে, শুধু এটুকু ভেবেই..

পরিকল্পনা আগেভাগে করুন:

কোথাও বেড়াতে গেলে এটি সবচেয়ে জরুরি। এতে অফিস থাকলে ছুটি পাওয়ার সমস্যা কম। বাস, ট্রেন বা বিমানের পছন্দমত রিজার্ভেশন পেতে সুবিধা ও তৎকালের খরচ দুটোই সাশ্রয় হয়ে থাকে। হোটেল অগ্রিম বুকিংএর প্রবণতা যে হারে বাড়ছে এটিও সত্ত্বর সেরে রাখুন। এতে রুম পজিশন ও পছন্দসই হোটেল, রিসর্ট বা হোমস্টে বাছাই করতেও পারবেন।

ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করুন:

আজকাল বিভিন্ন রকম হোটেল বুকিং সাইট যেমন gobibo, makemytrip, cleartrip ইত্যদি ইত্যদিতে অনেকরকম offer থাকে। তাদের থেকে তুলনামূলক ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুক করলে খরচ অনেকটাই সাশ্রয় করতে পারবেন। google ম্যাপ দেখে সেই জায়গার সুবিধাজনক হোটেল ও কাছাকাছি রেস্টুরেন্টে, মিনারেল water জোন জেনে রাখলে আপনার যাতায়াত সমস্যা ও বাজেট দুইই বাঁচবে।

tour planning3

ভ্রমণ লাগেজ বানান:
প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার কম্প্যাক্ট লাগেজ ব্যাগ বানান। তাতে রাখুন নিজের দরকারী ওষুধ (মূলত বমি, পেটের সমস্যা, জ্বর, অ্যালার্জি ও salbutamol ইনহেলার) ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য, যেখানে সেখানে স্টে করার সংক্ষিপ্ত জিনিসপত্র। ভাল জুতো, চা–‌এর ইলেকট্রিক ক্যটেল কিনে রেখে দিন। ক্যটেলে চা, কফি, ডিমসেদ্ধ নুডলস ট্রেনে বা হোটেলে বানিয়ে নিতে পারবেন। ড্রাই ফ্রুটস, মুড়ি, ছোলাভাজা এগুলো রাখলে যাত্রাপথের আনন্দ তো বাড়বেই সঙ্গে গ্যাস ও বাজেটকে অনেকটাই আয়ত্তে রাখতে পারবেন বলে আমার ধারণা।

স্থানীয় খাবার খান:
যেখানে যাচ্ছেন সেই জায়গার খাবার খান। এতে ওই জায়গার প্রতি টান ও জ্ঞান দুটোই বাড়বে। সেই সঙ্গে সেরা খাবার ও পকেটের সাশ্রয় দুটোই হবে। জানবেন দক্ষিণ ভারতে আপনি ভাত খেতে গেলে সেই টেষ্টও পাবেন না আর দামও বেশ চড়া। ঠিক উল্টোটা ওদের ক্ষেত্রেও খাটে। লালমোহনবাবু থাকলে নির্ঘাত বলতেন –পাহাড়ে গিয়ে থুপকা মোমো, নুডলস খাবেন না, উড়িষ্যা গিয়ে সরপোড়া খাবো না তো বেঁচে থাকার মানেটা কি মশাই?

পানীয় জল:
বেড়াতে গেলে পানীয় জল একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। একটু উল্টাপাল্টা হলেই গোটা ভ্রমণ মাটি হতে পারে তাই মিনারেলযুক্ত বিশুদ্ধ জল খাওয়াই ভাল। কিন্তু লম্বা ট্যুরে এটা বাজেটকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে জল নিয়ে যান। আজকাল প্ল্যাটফর্ম ও গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ জায়গাতেই পানীয় বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা থাকে। সুযোগমতো খালি বোতল রিফিল করিয়ে নিন। মেডিসিন শপ থেকে জিওলিন কিনে নিন। পরিমাণমত জলে জিওলিন মিশিয়ে নিন।

tour planning2

গ্রুপ তৈরি করুন:
পছন্দের বন্ধুবান্ধব বা ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে গ্রুপ তৈরি করুন। সেইমতো গাড়িভাড়া ও থাকার জায়গা পছন্দ করুন। এতে ঘোরার মজা আর খরচ দুটোই আয়ত্তে থাকবে। আজকাল অনেক নো প্রফিট গ্রুপ আছে যাদের সাথে গেলে আপনার খরচ কমবে ও ভবিষ্যতের ভ্রমণসঙ্গী হওয়ার পথটিও খোলা থাকবে।

শেয়ার গাড়ি:

জেনে রাখুন, শেয়ারে গেলে মান ইজ্জত যায় না। বরং আপনার মনের বিস্তার আর ভ্রমণ উৎসাহের পরিচয় প্রকাশ পায়। পরিকল্পনা এমনভাবে করুন, যেন শেয়ার গাড়ি যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করা যায়। সেরকম হলে কিছুটা শেয়ার, কিছুটা বুকিং করুন। ভুলবেন না শেয়ারে কিন্তু অন্যরকম মজা। কে বলতে পারে, হয়ত এখান থেকেই ভাল বন্ধু পেয়ে গেলেন।

হোমস্টেতে থাকুন:
মুখ বাঁকাবেন না। আজকাল হোমস্টে কিন্তু খুবই ভাল অপশন। বেশিরভাগ হোমস্টে খাওয়া থাকা নিয়েই ট্যারিফ রাখে এবং অনেকটাই সস্তা। যদিও দার্জিলিং তথা পশ্চিমবঙ্গের হোমস্টেগুলিতে পর্যবেক্ষণের ও পারদর্শিতার অভাব দেখা গেলেও সিকিমের মতো জায়গায় হোমস্টের সুবিধা ভাল। হোটেলেও পাবেন কিনা সন্দেহ! তার থেকেও বড় কথা হল আন্তরিকতা। এই আন্তরিক আতিথেয়তা হোটেলে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

অফ সিজন:
অফ সিজনে চেনা জায়গার সৌন্দর্যও অচেনা ঠেকতে পারে। তাই অফসিজিণে অনেকেই বেড়াতে যান। এতে হোটেল খরচ, গাড়ি খরচ সবই বাঁচে।

অফবিট ডেস্টিনেশন:

এটিও খরচ কমাবার একটি অপশন হতে পারে। সাধারনত ওই সব জায়গায় থাকা–‌খাওয়ার খরচ কম থাকে ও তদারকি বেশি পেতে পারেন।

ট্রাভেল এজেন্ট:

নিজেরা যাওয়ার আনন্দ ও উত্তেজনা দুটোই দূর্দান্ত। তাই নিজেরাই বেরিয়ে পড়ুন। কনফিডেন্স পাবেন। টুরিস্টদের সাহায্যকারী লোকের অভাব সচরাচর হয় না। যদিও অল্প কিছু জায়গা ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে গেলে সুবিধা হয়। তবু জেনে রাখুন তাদের ওটা জীবিকা সুতরাং তাদের লভ্যাংশ আপনার কাছ থেকেই আসে।

হলিডে হোম:
আজকাল ব্যাংক ও নানান সমিতির নানান হলিডে হোম গড়ে উঠেছে। অনলাইনে ফান্ড ট্রান্সফার বা সরাসরি গিয়ে বুক করতে পারেন। এতে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে যত দ্রুত সম্ভব বুক করুন।

মার্কেটিং:
সারাবছর ধরেই তো এই কাজটি করেন। নিজেদের ট্যাঁক খালি না করে দু–‌চারটা দ্রষ্টব্য কিনে আনলে কেউ অভিশাপ দেবে না। ঘোরার আনন্দ ঘোরাতেই রাখুন না।
সুতরাং আর দেরী কেন? চলুন বেরিয়ে পড়ি…

লিখলেন: সন্দীপ লায়েক (পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী)‌

(‌এমন কিছু জরুরি পরামর্শ বা অভিজ্ঞতার কথা আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে পাঠক হয়ত উপকৃত হলেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.