প্রসেনজিৎ বর্মণ
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে কার কেমন সম্পর্ক ছিল? কে কতটা কাছের মানুষ ছিলেন? রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এখন আর বাজপেয়ী বেঁচে নেই। তাই যে যা খুশি গল্প শুনিয়ে দিতেই পারেন। শুনিয়ে দিচ্ছেনও। বিশেষ করে সত্যি বলার সুনাম যখন অনেকের নেই, তখন সংশয় থেকেই যায়।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বাজপেয়ী জমানায় ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। প্রথমে ছিলেন রেলমন্ত্রী। পরে হয়েছিলেন কয়লা মন্ত্রী। কোনও সন্দেহ নেই, প্রয়োজনের তুলনায় তাঁকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়েছিলেন আদবানি–বাজপেয়ী। মাত্র ৯ জন সাংসদের একটি দলকে দেওয়া হয়েছিল রেলমন্ত্রক।
২০০১। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের জোট। তৃণমূলের প্রার্থীতালিকাও ঘোষণা হয়ে গেল। দেওয়াল লিখন হয়ে গেল। হঠাৎ, দিদিমনি এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ত্যাহেলতা কান্ডের প্রতিবাদে সরকার ছাড়লেন। রাতারাতি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়ে গেল। নতুন করে ঘোষণা করা হল প্রার্থীতালিকা।
সেবার নির্বাচনের পর বলে বসলেন গিল পারচেজড। এখানেই থামলেন না। বললেন, বিজেপি তাঁর ওপর বদলা নিতে চেয়েছে। তাঁকে হারাতে চেয়েছে। কংগ্রেসও পেছন থেকে ছুরি মেরেছে। সেই সময়ের কাগজ ঘাঁটলেই এই মহান উক্তিগুলো পাওয়া যাবে।
তারপর কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার ফিরে গেলেন এনডিএ–তে। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার ডাক আর আসছে না। সেই সময় কীরকম তদ্বির হয়েছিল, নাম ঘোষণার পরেও কেন রাগ করে শপথ নিতে গেলেন না, সে কথা পুরনো অনেকেরই মনে আছে। দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। পরে জুটেছিল কয়লা দপ্তর।
প্রশ্ন হল, বাজপেয়ীজির সঙ্গে এতই যখন সম্পর্ক ভাল, তাহলে এনডিএ ছাড়তে হল কে? যে কারণ দেখিয়ে ছাড়া হল, সেই ত্যাহেলকার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আবার ফিরতে হল কেন? আর ত্যাহেলকায় কী দেখিয়েছিল? কেউ কেউ হাত পেতে টাকা নিচ্ছিলেন। নারদা কাণ্ডে তাঁর দলের এক ডজনের বেশি নেতা–মন্ত্রী সেই কাণ্ডটাই করলেন। কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে পারলেন? তাঁদের কেউ মন্ত্রী, কেউ সাংসদ, কেউ মেয়র।
নেত্রীর এখনকার গতিবিধি এটুকু বুঝিয়ে দেয়, ত্যাহেলকার প্রতিবাদটা মোটেই আন্তরিক ছিল না। সেদিনের প্রতিবাদ যদি আন্তরিক হত, তাহলে এই রাঘব বোয়ালরা এত জামাই আদরে থাকত না।