এত তাড়াহুড়ো কীসের? আরেকটু ধৈর্য রাখা গেল না!

মৃত্যু এখন রীতিমতো ইভেন্ট। তাই আর মৃত্যু পর্যন্ত তর সয় না চ্যানেলগুলির। সকাল থেকেই স্টুডিও–তে শুরু হয়ে গেল স্মৃতিচারণ পর্ব। সন্ধে পর্যন্ত আর অপেক্ষা করা গেল না। বাজপেয়ী জানতেন, সংযম কাকে বলে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে মিডিয়া দেখিয়ে দিল, সংযম–শিষ্টাচার কীভাবে বিসর্জন দিতে হয়। লিখেছেন অজয় কুমার।।

কারও যেন তর সইছে না। কে কত আগে ব্রেকিং নিউজ শোনাতে পারে। কে কত জলদি অতিথিদের স্টুডিওতে বসিয়ে দিতে পারে।

অটল বিহারী বাজপেয়ীর অবস্থা সঙ্কটজনক। ঘনঘন নেতা–মন্ত্রীদের হাসপাতালে যাওয়া। একে একে মুখ্যমন্ত্রীদের হাজির হয়ে যাওয়া। বোঝাই যাচ্ছিল, বিকেল নাগাদ কী ঘোষণা হতে চলেছে।

কেউ যখন মৃত্যু পথযাত্রী, তখন গণমাধ্যমকে কিছু আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। ধরা যাক, কেউ রাত এগারোটায় মারা গেলেন। তখন তো আর কাগজ সাজানো সম্ভব নয়। নানা লোকের স্মৃতিচারণ তুলে এনে তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছাপাও মুশকিল। তাই এসব ক্ষেত্রে আগাম কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। কিছু পুরনো ছবি বেছে রাখতে হয়। অবিচুয়্যারি তৈরি রাখতে হয়। এমনকী কিছু প্রতিক্রিয়াও তুলে রাখতে হয়। এটা অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। খবরের কাগজের মতোই ইলেকট্রনিক মিডিয়াকেও তাদের মতো করে তৈরি থাকতে হয়।

atal ji3

কিন্তু এবার যেন সব শিষ্টাচারকে ছাপিয়ে গেল। হিন্দি চ্যানেলগুলি সকাল থেকেই বিশেষজ্ঞদের বসিয়ে দিল। একে একে সবাই স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন। প্রায় অধিকাংশ কথা পাস্ট টেন্সের। অর্থাৎ, তিনি এই করতেন, ওই বলতেন, এই খেতে ভালবাসতেন… এই জাতীয় কথোপকথন।

বাংলা চ্যানেলই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? ২৪ ঘণ্টা ধরে আনল বাজপেয়ীজির পুরনো এক বন্ধুকে। তাঁকে স্টুডিওতে বসিয়ে নানা কথা বলিয়ে নেওয়া হল। ধরেই নেওয়া হল, আর তিনি জীবিত নেই। সেই দেখাদেখি এবিপি আনন্দ আরেকজনের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে গিল। সেই ভদ্রলোককে দিয়েও এটা–সেটা বলিয়ে নেওয়া হল। এবং কী অবলীলায় সেগুলো দেখিয়েও দেওয়া হল।

চ্যানেল চাইলে আগাম রেকর্ড করে রাখতেই পারত। কিন্তু অন্তত মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত। সেটাই ন্যূনতম শিষ্টাচার। কিন্তু মৃত্যু যখন ইভেন্ট, তখন কে আর শিষ্টাচার দেখায়! যেভাবেই হোক, টিআরপি বাড়াতে হবে।

বাজপেয়ী জানতেন সংযম কাকে বলে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে মিডিয়া দেখিয়ে দিল, সংযম কীভাবে জলাঞ্জলি দিতে হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.