হেমিংওয়ের বাড়িতে বাংলা বই!

মধুজা মুখোপাধ্যায়

আচ্ছা ধরুন আপনি হলেন আমার মতো একজন হোমসিক মানুষ।  সেখানে নিজের দেশ থেকে বহুদূরে আমেরিকার এক ছোট্ট শহরে একজন আমেরিকান লেখকের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে যদি তার শোবার ঘরে কাঁচের দেওয়াল আলমারিতে বাংলায় লেখা বই দেখতে পান।  কেমন  লাগবে ?

ভাবছেন বানিয়ে বলছি ? মোটেই না।  আমি বলছি Ernest Hemingway মহাশয় বাড়ির কথা আর বই টি হলো  The Old Man And the Sea এর বাংলা অনুবাদ । ফ্লোরিডা রাজ্যের একদম দক্ষিণে, যেটা আমেরিকারও দক্ষিণ  বটে,  সেখানে একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ হলো  Key West . সেখানে বেশ কিছুদিনের বাসিন্দা ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন লেখক হেমিংওয়ে।

 

হেমিংওয়ের সেই বাংলো বাড়ি।
হেমিংওয়ের সেই বাংলো বাড়ি।

তাঁর সেই বাগান বাড়ি এখন Key West এর অন্যতম দ্রষ্টব্য। ঘন বাগান আর গাছপালা দিয়ে ঘেরা পুরোনো আমলের Spanish Colonial ধাঁচে তৈরি দোতলা বাংলো বাড়ি। বাড়ির রঙ হলুদ আর দরজা জানলা গাড় সবুজ। ভেতরে কড়িকাঠ দেখলে উত্তর কলকাতার বাড়ির কথা মনে পড়ে যাবে। হেমিংওয়ের  বাড়ির সামনে বেশ চওড়া রাস্তা আর তার অন্য দিকে পারে Key West Lighthouse.

 

হেমিংওয়ের বাড়িতে রয়েছে সেই বাংলা বই।।
হেমিংওয়ের বাড়িতে রয়েছে সেই বাংলা বই।।

এখানেই শেষ নয় – বাড়িটির অন্যতম আকর্ষণ হল, এই বাড়ির বাসিন্দারা।  প্রায় ৪৫ টি ছ’ আঙুলের বেড়াল থাকে এই বাড়িতে। অবাক লাগছে শুনতে? একটু অবাক হবারই কথা।  সাধারণত বেড়ালের সামনের দুটো পায়ে পাঁচটা করে আঙ্গুল থাকে। বহু বছর আগে হেমিংওয়েকে  তাঁর এক নাবিক  বন্ধু এই ছ ‘আঙুলের বেড়াল উপহার  দিয়েছিলেন যার নাম ছিল Snowball (মতান্তরে Snow White)। এদের বলে Polydactyl Cat. তাঁর সেই পরম প্রিয় বেড়ালের বংশধরেরা আজ এই বাড়ির অভিন্ন অংশ বিশেষ ।  লেখকের শোবার খাট থেকে শুরু করে তাঁর লেখার টেবিল , খাবার টেবিল ,স্নান ঘর , বাগান ,ছাদ  যেখানে চোখ যায় সেখানেই ছ’ আঙুলের বেড়াল বিরাজ করছে। আমাদের tour guide প্রথমেই সচেতন করে দিয়েছিলেন এদের কে বিরক্ত করা চলবে না। কারণ এরা মানুষের মতো বিরক্ত করা পছন্দ করে না।

 

Key West বেড়াতে যাচ্ছি শুনে মা বলে দিয়েছিলেন হেমিংওয়ের বাড়িটা দেখে আসিস।  ভাগ্যিস মিস করিনি। একে মার্কিন লেখকের বাড়িতে  বাংলা বইয়ের ঝলক, তার ওপর উত্তর কলকাতার গন্ধ আর সাথে এক পরিচিত প্রাণীর অপরিচিত রূপ । পৃথিবীতে কত বিস্ময় আছে তার সিকি ভাগের স্বাদও  এখনও পেলাম না !

​​madhuja4

হেমিংওয়ের বাড়ি থেকে যখন বেরিয়ে আসছি, পেছন ফিরে দেখলাম বাড়ির বাসিন্দাদের খাবার সময় হযেছে। আর পরম আনন্দে তারা বাড়ির পেছনের বাগানে ভিড় জমাচ্ছে একে একে । তার মধ্যেই একজন দেখলাম আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে । ঠিক মনে হলো আমাকে সে ধন্যবাদ জানালো তাদের সঙ্গে মোলাকাত করার জন্য।

 

(ছবি  সৌজন্য :শুভজিৎ সেন)

 

amazonfashion

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.