বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদনঃ সকাল থেকেই শহরের সব রাস্তা যেন এসে মিশছিল গড়ের মাঠে। কেউ এসেছেন আগের রাতেই। কেউ বা সকালের ট্রেনে। কেউ একটু বেলায়।
কিন্তু কী বার্তা নিয়ে ফিরলেন কর্মীরা ? কিছুটা যেন দ্বিধা থেকেই গেল। প্রকাশ কারাতরা সমানে আক্রমণ করে গেলেন বিজেপি-কে। এমনকি বিজেপির বিরুদ্ধে বাকি দলগুলির জোটের আহ্বানও জানিয়ে গেলেন। জোট মানে তো তৃণমূলের সঙ্গেও জোট! কিছুটা দ্বিধা থেকেই গেল। শুরুতে সবারই একটু ধৈর্য বেশি থাকে। তাই কারাতের কথা হয়ত হজম করলেন কর্মী, সমর্থকরা। শেষ বক্তা যদি কারাত হতেন! বুঝতে পারতেন, তাঁর ভাষণ কোনও দাগ কাটতেই পারল না।
সীতারাম ইয়েচুরির কথাতেও সিংহভাগজুড়ে বিজেপি। তৃণমূল, চিটফান্ড এসব এল ঠিকই, তবে অনেকটা বুড়ি ছোঁয়ার মতো। সেখানেন মাসের সরকার, বেসরকারিকরণ, দিল্লি ভোটের ফল, মোদি-মমতা আঁতাত এসব বিষয়গুলোই অগ্রাধিকার পেল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই সভায় তাঁর ভূমিকা একেবারেই অন্যরকম। তিনি এখানে প্রধান বক্তা নন। সমাবেশের সভাপতি। শুরু আর শেষ মিলিয়ে বললেন মিনিট সাতেক। কিন্তু চড়া সুরে। অসভ্য সরকার, অসৎ সরকার, নরককুন্ড বলে অনেকটাই উজ্জীবিত করলেন দূর থেকে আসা কর্মীদের। তবু, তাঁর কথা নয়, দাঁড়ি, ‘নতুন লুক’ এসব নিয়েই বেশি আলোচনা হবে। লোক কম, একথা যখন বলা যাচ্ছে না, তখন আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়াই বোধ হয় সহজ রাস্তা।
সবথেকে বেশি হাততালি পেলেন মহম্মদ সেলিম। ব্রিগেডের মঞ্চে তিনিই সংখ্যালঘু মুখ। আগে এই দায়িত্বটা পালন করতেন মহম্মদ আমিন। তবে সেলিমের ভাষণ অনেক বেশি জ্বালাময়ী। দূর থেকে আসা কর্মীদের পালস বোঝেন। কোন কথায় হাততালি পড়ে, বোঝেন। তাঁর আক্রমণের মূল নিশানায় অবশ্য তৃণমূল।
রেখা গোস্বামী। ব্রিগেডে প্রথম সুযোগ। নারী দিবস নিয়েই চলে গেল কিছুটা সময়। কিছুটা নিজের পুরানো দপ্তরের ফিরিস্তি। বাকিটুকু ছকে বাঁধা। কখন শেষ হয়, যেন তারই অপেক্ষা করছিলেন কর্মীরা। বড় গায়কদের আগে গাইতে উঠলে বেশ বিড়ম্বনা। গান শেষ হওয়ার পরেই হাততালি পড়ে। ভাল গানের প্রশংসা না তাড়াতাড়ি শেষ করার বার্তা, বোঝা মুশকিল।
বিমান বসু। সুবক্তা হিসেবে তেমন সুনাম নেই। বরং, তাঁর কথার জন্য মাঝে মাঝেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দলকে। এদিনও বেশ কিছু আলটপকা মন্তব্য বেরিয়ে এল। কিন্তু একইদিনে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা, মমতার দিল্লিযাত্রাসহ নানা ইস্যু। তাই মিডিয়ায় তেমন জায়গা নেই। এযাত্রা বিতর্কগুলো এড়ানো গেল।
সূর্যকান্ত মিশ্র। গত সাড়ে তিন বছরে কোনও বেফাঁস কথা বলেছেন, এমন উদাহরণ বিরোধীরাও দিতে পারবেন না। এদিনও সেই চেনা পথে। তবে আক্রমণের তির বেশ ঝাঁঝাঁল। মূল আক্রমণের লক্ষ্য অবশ্যই তৃণমূল। বোঝেন, কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথাই বেশি শুনতে চান। পরিবহনমন্ত্রীকে কখনও গ্যারাজে পাঠালেন, মুকুল ঝরে যাওয়া থেকে বসন্তের পলাশ ফুল, শ্লেষ যেমন ছিল, তেমনই ছিল রুখে দাঁড়ানোর বার্তা।
শেষবেলায় সভাপতিকে ফের কিছু বলতে হয়, সেটাই রেওয়াজ। তবে মূল বক্তা ছিলেন সূর্যকান্তই। দিনের শেষে তাঁর কথাই বেশি করে ছুঁয়ে গেল বাম কর্মী সমর্থকদের মনে। শুরুতেই যেন সুর বেঁধে দিয়েছিলেন সূর্যকান্ত, ‘আমরা আসি আপনাদের লাল সেলাম জানাতে। আমাদের থেকেও অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আপনাদের লড়াই করতে হয়। আপনারা আছেন বলেই আমরা আছি।’ নিছক কথার কথা নয়, মন থেকে বিশ্বাসও করেন। এই বিশ্বাসটুকু যদি প্রকাশ কারাতদের থাকত!