জোয়ারে কাছে, ভাটায় দূরে

একেবারেই নির্জন সৈকত। বর্ষায় হাতছানি দিচ্ছে। সৈকত ধরে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে চলুন সমুদ্রের দিকে। বাঁকিপুটের সন্ধান দিলেন বৃষ্টি চৌধুরি।।

চলো রিনা, ক্যাসুরিনা
ছায়া গায়ে এঁকে বেঁকে
লাল কাঁকরের পথ ধরে

যাঁদের পুরনো গান নিয়ে নস্টালজিয়া আছে, তাঁরা এতক্ষণে তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই গানের সঙ্গে গুনগুন করতে শুরু করে দিয়েছেন।
যেখানে কৃষ্ণচূড়া লালে লাল/‌যেখানে বন্ধু হবে কিছু সাঁওতাল। না, এখানে লালে লাহ কৃষ্ণচূড়া পাবেন না। সাঁওতাল বন্ধুও পাবেন না। তবে সমুদ্র সৈকতের ওপর লাল কাঁকড়ার মিছিল পাবেন। নির্জন এক সৈকত পাবেন। ক্যাসুরিনার জঙ্গল পাবেন। ঝাউয়ের সারি তো আছেই। পুরনো গানের সমঝদারেরা এবার ধরতে পারেন সেই পিন্টু ভট্টাচার্য। চলো না দিঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউ বনের ছায়ায় ছায়ায়।

bankiput
আসলে, যে জায়গার কথা লিখতে গিয়ে এত ভনিতা, সেখানে কোনও শপিং মল নেই। পর্যটকের গিজগিজ নেই। এখানে অখণ্ড অবসর। এসব গান গাইতে গাইতে নিরালা সৈকতে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে বেড়াতে পারেন। সমুদ্র আছে ঠিকই। কিন্তু তার বড়ই রহস্য। জোয়ারের সময় আপনার খুব কাছে। ভাটার সময় চলে যায় অনেকটাই দূরে। অনেকটাই ওড়িশার চাঁদিপুরের মতো।
জায়গার নাম বাকিপুট। জুনপুটের মাসতুতো ভাই বলতে পারেন। না, ভিনরাজ্যে যেতে হবে না। এই সামনে, পূর্ব মেদিনীপুরের এক অচেনা সৈকত। দিঘা, মন্দারমণি বা শঙ্করপুর তো বহুল প্রচলিত। একবার এই অচেনা বাঁকিপুটে না হয় ঘুরে এলেন। বাসে বা ট্রেনে কাঁথি। সেখান থেকে ভুটভুটি বা টোটোয় চলে যান সেই ঠিকানায়। এখানে গড়পড়তা পর্যটকের ভিড় নেই। সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি নেই। একেবারে নির্জন সৈকত বলতে যা বোঝায়, অনেকটা সেইরকম। কাছে শুধু সমুদ্র, সৈকত, কাঁকড়া, জঙ্গল, নির্জনতা। ঘুরতে গেলে আর কী চাই?‌ থাকা–‌খাওয়া নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই। লাইন দিয়ে একঝাঁক হোটেল বা রেস্তোরাঁ হয়ত নেই। যা আছে, তা দিয়ে দিব্যি চলে যাবে। গেছেন তো একান্তে, নির্জনে দুটো দিন কাটাবেন বলে। ঝাঁ চকচকে হোটেল, রেস্তোরাঁ বা শপিং মল দিয়ে কী করবেন?‌ এই মেঘলা আবহে যদি বৃষ্টি পড়ে, পড়ুক না, মন্দ কী?‌ মোবাইল বা মানিব্যাগ না হয় হোটেলে রেখেই বেরোলেন।
দেখতে চাইলে আশেপাশে অনেককিছুই আছে। দরিয়াপুরের লাইটহাউস ব্রিটিশ আমলের তৈরি। নতুন করে সেটির সংস্কার হয়েছে। সেখান থেকে চারপাশটা খুব সুন্দর দেখা যায়। একটা দিন টোটো নিয়ে এদিক–‌ওদিক ঘুরে আসতে পারেন। সেই তালিকায় থাকতে পারে কপালকুণ্ডলা (‌হ্যাঁ, বঙ্কিমের সেই কপালকুণ্ডলা)‌। আশপাশের আরও কয়েকটা নির্জন সৈকতও ঘুরে আসতে পারেন।
বর্ষার মেঘ আপনাকে ডাকছে। সাড়া দিন।

bhraman

sejuti-banner

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.