শীতের রোদে কমলালেবুর গ্রামে

অন্তরা চৌধুরি

সত্যি কথাটা প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভাল। গিয়েছিলাম বাগোড়া। যদিও আগে সেখানে গেছি। অসাধারণ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। যে কোনও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে এই জায়গা বেশ উপভোগ্য। বিশেষত যাঁরা একটু নির্জনতা ভালবাসেন। ছয় দিকে চলে গেছে ছ’টা রাস্তা। একেকটা রাস্তা একেকরকম। বিশাল বিশাল পাইন গাছ ঘেরা আলো–‌আঁধারি রহস্যময় পরিবেশ, পাখির ডাক, রাস্তার দুপাশে ফুটে থাকা থোকা থোকা রোডোডেনড্রন, ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর গায়ে হিমেল মেঘের চাদর–‌ যে কোনও গোমড়ামুখো মানুষেরও মন ভাল করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তার সঙ্গে বিশুদ্ধ হিমালয়ান কন্‌কনে বাতাস ফ্রি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাগোড়াতে থাকা গেল না। অসম্ভব ঠাণ্ডা। দিনের বেলা তবু সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু সন্ধে নামলেই একেবারে দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার অবস্থা। সৌন্দর্য তখন মাথায় উঠেছে। পালাতে পারলে বাঁচি। তাই অন্য ঠিকানার খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। ইচ্ছে হল, আরেকটু নীচের দিকে যাব। যেখানে বেশ মনোরম ঠাণ্ডা, সেখানেই থাকব।

যেতে যেতেঃ
অনেকের কাছেই সিটং এর নাম শুনেছিলাম। বেশ কয়েকবার যাওয়ার ইচ্ছেও হয়েছে। কিন্তু জায়গাটা কেমন, সে নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিলই। সিটং নাকি কমলালেবুর গ্রাম! ছোটোবেলায় গাছ থেকে আম, জাম, পেয়ারা এসব পেড়েছি। পাতিলেবুও ছিঁড়েছি। কিন্তু কমলালেবু তো পাড়িনি। গাছটাই দেখিনি তো পাড়ব কোথা থেকে। সেই একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল মনের মধ্যে। বাগোড়া থেকে বেরিয়ে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে নীচের দিকে নেমে চলেছি। ড্রাইভার বেশ কয়েকবারই জিজ্ঞাসা করল, সিটংয়ের কোন হোটেলে থাকবেন?‌ আমরা যেহেতু আগে থেকে কিছুই ঠিক করে বেরোইনি, তাই থাকার জায়গাটা সেই ড্রাইভার দাজুর হাতেই ছেড়ে দিলাম। ‘আমরা কোথায় থাকব, আপনার ওপরই ছেড়ে দিলাম। চলুন, যেতে যেতে যেখানে ভাল লাগবে, নেমে পড়ব।’ তিনিও বেশ দ্বন্দ্বে। অনলাইন বুকিংয়ের যুগ। সবাই আগে থেকে বুকিং–‌টুকিং করেই আসেন। কোনও ঠিক নেই, যেখানে খুশি নেমে পড়বে, এমন পর্যটক তিনিও বোধ হয় দেখেননি। একটা সময় বেশ ঝাঁ চকচকে এক হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কোনও সন্দেহ নেই, হোটেলটা যথেষ্ট সুন্দর। যাঁরা জাঁকজমক বা তিনতারা হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে বেড়াতে আসেন, তাঁদের ভাল লাগতেই পারে। কিন্তু কেমন যেন কংক্রিটের জঙ্গল। ঠিক মনে ধরল না। দূর থেকেই নমস্কার জানিয়ে ফের অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ল কমলালেবুর গাছ। এখানে কমলালেবুর মরশুম আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। তখন যেহেতু কমলালেবুর মরশুম শেষ, তবুও গোটাকতক কমলা তখনও গাছের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেগুলো পাড়ার কথা বলতেই ড্রাইভার জানালেন, যার বাড়ি, তাকে না বলে লেবু নেওয়া নাকি যাবে না। আমরা তাতেই রাজি। ড্রাইভার বাড়ির ভেতর ঢুকে কী বললেন, কে জানে। দেখলাম, একটি ছোটখাটো কমবয়সী নেপালি ছোকরা হাসি মুখে বেরিয়ে এসে লেবু পাড়তে শুরু করল। (যে বেরিয়ে এল, তাকে আপাদমস্তক একবার মেপে নিলাম। এইটুকু ছেলেটা বাড়ির মালিক!) আশেপাশের কৌতূহলী কয়েকটা চোখে মুখে তখন হাসির ঝলক। আমাদের শহুরে আদিখ্যেতা আর হ্যাংলাপনার জন্যই যে হাসি, সেটা বুঝতে অসুবিধে হল না। বেশ কয়েকটা কমলালেবু নিয়ে আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম। আসলে ওঁরাও জানেন যে, এদের দৌড় ওই দু–‌চারটে পর্যন্তই। তাই নো অবজেকশজন।

 

কে ওই বিদেশিনী?‌
কিছুদূর যাওয়ার পরই রাস্তার পাশে একটা ছবির মতো সুন্দর বাড়ি চোখে পড়ল। সামনে অজস্র ফুলে ঘেরা লন। সেখানে বসে এক বিদেশিনী আলতো রোদ গায়ে মেখে একমনে বই পড়ছেন। দৃশ্যটা মনে গেঁথে যাওয়ার মতোই। জায়গাটা একঝলক দেখেই বেশ ভাল লেগে গেল। জানা গেল, সেটা এক নেপালী পরিচালিত হোমস্টে। নাম ইয়াকসা। বাড়ির সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। নানারকম পাহাড়ি ফুল বাগান আলো করে রেখেছে। অদ্ভুত প্রজাতির পাতাবাহার ও অর্কিডও রয়েছে। পাশেই রয়েছে বহু পুরনো বিশাল এক চার্চ। অন্দর সজ্জাতেও রয়েছে রুচি ও সংবেদনশীলতার ছোঁয়া। রুমটাও ভারি সুন্দর। চারপাশে অনেকগুলো জানালা। সেই জানলা দিয়ে যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই পাহাড়ের সারি। ঠাণ্ডাটাও বেশ উপভোগ্য। নেপালীদের আতিথেয়তার তো কোনও তুলনাই হয় না। স্নানপর্ব ও নেপালী লাঞ্চপর্ব সেরে বেরিয়ে পড়লাম।

sittong3

ঢালু পথে নেমে যাওয়া
যে কোনও জায়গায় গিয়ে পায়ে হেঁটে না ঘুরলে সেই জায়গার ফ্লেভারটা ঠিক পাওয়া যায় না। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে এঁকে বেঁকে নীচের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা স্পষ্ট দেখা যায়। পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর সাজানো একটা গ্রাম। এখানে ঠাণ্ডাটা কম বলে গায়ে হালকা একটা চাদরই যথেষ্ট। পাহাড়ি রাস্তা এঁকে বেঁকে গেছে অনেক দূর। আমরাও সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। জায়গাটা বেশ নির্জন। হাঁটতে হাঁটতে ক্যামেরা অন করে রাখাই ভাল। কোনও একটা পাহাড়ি বাঁকে হঠাৎ দেখা পাওয়া যেতে পারে দু-চারটে হর্নবিল বা চেস্টনাটের। রাস্তার দু’পাশে স্থানীয় মানুষদের ছোট ছোট বাড়ি। প্রত্যেকের বাড়ির সামনেই রয়েছে অজস্র নাম না জানা ফুলের গাছ। রয়েছে গরু–‌বাছুর। ধাপে ধাপে রয়েছে এলাচ গাছের সারি। ভুট্টাও রয়েছে তার সঙ্গে। রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা দোকান। প্রয়োজনীয় সব জিনিসই মোটামুটি পাওয়া যায়।

আদিম সরলতা
হাঁটতে হাঁটতে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কী সহজ সরল নিস্তরঙ্গ এদের জীবন! কোন রাজা মরল, কে নতুন রাজা হল, পৃথিবীর কোথায় কী ঘটে গেল এসব খবর এদের না জানলেও চলে। জানলেও তাদের মধ্যে বিশেষ কোনও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে না। আর সে কারণেই এমন আদিম সরলতায় তারা জীবন যাপন করতে পারে। পাহাড়ের লোকের মধ্যে সবচেয়ে যেটা ভাল লাগে, কারও মধ্যে কোনও হিংসে নেই। কী নিবিড় বিশ্বাস একে অপরকে। শহরের মানুষের মধ্যে কত অবিশ্বাসের চোরাস্রোত। স্বামী স্ত্রীকে বিশ্বাস করে না, বাবা ছেলেকে বিশ্বাস করে না। সেখানে এখানকার মানুষ কী অবলীলায় নিজের এটিএম কার্ড দিয়ে দেয় পাড়ারই কোনও এক ছেলেকে। সে শহরে যাচ্ছে। টাকা তুলে আনবে। এখনকার যুগে এটা জাস্ট ভাবা যায় না। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকে বলেই তারা এখনও এতখানি সরল থাকতে পেরেছে। অতবড় একটা গ্রামে সবাই যেন সকলের আত্মীয়। চতুর্দিকে এত সমস্যার পাহাড়, কিন্তু অভিযোগের ফিরিস্তি নেই। কোনও সমস্যাই তাদের মুখের নিষ্পাপ হাসিকে কেড়ে নিতে পারেনি। আমরা শুধু হোম স্টের আবাসিক নই, মনে হচ্ছিল আমরা যেন সারা গ্রামেরই অতিথি। এসব দেখতে দেখতেই নেমে গেছি অনেক দূর। কখন যে এতটা নেমে এসেছি, বুঝতেও পারিনি। কিন্তু উঠব কীভাবে! এতটা রাস্তা আবার হেঁটে উঠতে হলে বেশ কষ্ট হবে। এদিকে, সূর্য তখন অস্তাচলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাস্তাঘাটেও আলো নেই। এমন সময় দেখতে পেলাম, জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে এক সরু রাস্তা উঠে গেছে ওপরের দিকে। যদিও সে রাস্তা আমাদের পক্ষে বেশ দুর্গম, তবুও একটু শর্টকার্টের আশায় সেই রাস্তাতেই উঠতেই হল। স্বল্প সময়ের মধ্যে রহস্য রোমাঞ্চের গন্ধ মাখা বেশ একটা ট্রেকিং হয়ে গেল।

sittong2

কমলা অভিযান
সারাদিন ঘোরা তো হল। কিন্তু যার জন্য এখানে আসা, সেই কমলালেবুর বাগান কোথায়?‌ আসার সময় তো মাত্র দু–‌চারটে গাছই যা চোখে পড়েছিল। হালকা মন খারাপ নিয়ে ফিরে এলাম। হোম স্টেতে তখন চা আর গরম গরম পকোড়ার প্রস্তুতি চলছে। সেই সুযোগেও ভাবলাম একটু ওপর দিকের রাস্তাটা ঘুরে আসি। দিনের আলো তখনও সবটুকু মুছে যায়নি। কয়েক পা যেতেই আমি অবাক। এত কাছেই যে কমলার বাগান রয়েছে, জানতেই পারিনি। সেখানে এক নেপালী চাচু তখন গরুকে খাবার দিচ্ছিল। তাকে গিয়ে আবদার করে বললাম, চাচু, দুটো কমলালেবু নেব? শুনে চাচু বেশ খুশি হয়ে নিজেই পাড়তে শুরু করে দিল। কিন্তু তার পাড়া আর আমার নিজের হাতে পাড়া তো এক নয়। তাই আমিও চেষ্টা তে কোনও কার্পণ্য রাখলাম না। কিন্তু পাড়তে গিয়ে বুঝলাম, কাজটা মোটেই অতটা সহজ নয়। কারণ গাছগুলো বেশ লম্বা। ডালে ডালে লুকোনো কাঁটা। আমিও যথেষ্ট লম্বা হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ সুবিধা করতে পারলাম না। অবশেষে একটা ঢ্যাঙা লাঠি নিয়েই নিজের প্রতিভা মেলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালালাম। এদিকে গাছের গোড়ায় দেওয়া রয়েছে গোবর। পচা গোবরে পা ঢুকে গিয়ে দুর্গন্ধের পাশাপাশি বেশ চুলকুনিও শুরু হয়েছে। কিন্তু কুছ পরোয়া নেহি। ওইরকম টসটসে রসালো কমলা চোখের সামনে ঝুলছে। আর আমি কি ডরাই সখি সামান্য গোবরকে? সুতরাং, টু বি কন্টিনিউ। মাটিতেও দেখছি অজস্র লেবু পড়ে আছে। দিনের শেষ আলোর বিন্দুটুকু মুছে যাওয়া পর্যন্ত চলল সেই কমলা অভিযান। কোলে–‌কাঁকালে যেখানে পেরেছি, লেবুকে বগলদাবা করেছি। তখন সে কী নির্মল আনন্দ। যেন আলেকজাণ্ডার রাজ্য জয় করিয়াছে।

ডিজেল শেরপা
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। বাইরে বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। আশে পাশের দু- চারটে বাড়ি থেকে ম্রিয়মান আলো চুঁইয়ে পড়ছে। পাহাড়ের বেশিরভাগ জায়গাতেই সোলার লাইট। কাজেই তীব্র নয়। চারিদিকে শুনশান। একটু সান্ধ্য ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোলাম। কিন্তু অন্ধকার, আর ভয়ঙ্কর নির্জনতার মাঝে বেশ গা ছমছম করতে লাগল। কয়েক পা গিয়েই ফিরে এলাম। রাত্রি আটটার মধ্যে দেশি চিকেন সহযোগে গরম গরম ভাতও খাওয়া হয়ে গেল। কিন্তু এরপর বাকি রাতটা কাটবে কীভাবে। কলকাতায় তো এখন সবে সন্ধ্যে। এমন সময় সহায় হলেন সেই হোমস্টের মালিক ডিজেল শেরপা। তাঁর আতিথেয়তার তো কোনও তুলনাই নেই। তিনি আমাদেরকে নিয়ে তাঁর ড্রয়িংরুমে বসলেন গল্প করতে। সুদৃশ্য বেতের চেয়ার, সামনেই ফায়ার প্লেসে জ্বলছে আগুন। আর পাশের টেবিলে রাখা রয়েছে অজস্র পাখি ও সিটং এর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ছবি। তিনি বলে চললেন তাঁর জীবনের নানান অভিজ্ঞতা, ট্রেকিং এর গল্প। মুগ্ধ হয়ে শুনতে শুনতে বেশ রাত হয়ে যায়। একঘুমে সকাল।

sittong1

আশে পাশে
পরের দিন আমরা গেলাম আপার সিটং এর বহু পুরনো এক মনেস্ট্রিতে। সেখান থেকে সিটং লেক হয়ে সোজা যোগীঘাট। ডিজেল শেরপার মুখে শুনেছিলাম ট্রেকিং এর কথা। পরের বার সেই সাধ পূরণ করতে হবে। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরতেই কেটে গেল। হিমালয়ের কোলে এই ছোট ছোট গ্রামগুলি এককথায় অপূর্ব। কোনও শিল্পী যেন নিতান্ত অন্যমনস্কতায় তুলির একটা টান দিয়েছেন। আর তার ক্যানভাসেই ফুটে উঠেছে এমন সব সুন্দর গ্রাম।

বিদায় অভ্যর্থনা
পরের দিন ফেরার পালা। থাকার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। সকাল সাতটাতেই গাড়ি চলে এসেছে। কিন্তু সেই সকালেও ডিজেল শেরপার কোনও তুলনা হয় না। নীচে নেমে বুঝলাম, আমাদের অনেক আগেই তাঁরা উঠে পড়েছেন। এবং অত সকালে আমাদের জন্য গরমাগরম ব্রেকফাস্ট রেডি। অত সকালে খেতে না পারায় তিনি সেগুলো সুপারির থালায় সুন্দর ভাবে প্যাক করে দিলেন। চলে আসার সময় তিনি খাদা (উত্তরীয়) ও চন্দনের ফোটা পরিয়ে মঙ্গল কামনা করলেন। এটা নাকি তাঁদের ট্রাডিশন। চোখে জল এসে গিয়েছিল। মাত্র একদিনের পরিচয়ে এরা মানুষকে এত আপন করে কীভাবে! কর্পোরেট হোটেলে সব স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া গেলেও এই উষ্ণ আতিথেয়তা ও ভালবাসা পাওয়া যাবে না।

মংপুতে রবীন্দ্রনাথ
ফিরে আসার পথে মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়ি দেখলাম। যেখানে রবীন্দ্রনাথ তিনবার এসেছিলেন। বেশ কিছু দিন ছিলেন। সকালবেলায় তখন মিউজিয়াম বন্ধই ছিল। পাশেই রয়েছে সিঙ্কোনা ফ্যাক্টরি। রাস্তার দুপাশে অজস্র সিঙ্কোনা গাছ। ইচ্ছে ছিল পরেরবার এসে মংপুতে থাকার। কিন্তু সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও হোম স্টে চালু হয়নি। ভবিষ্যতে হবে হয়ত। একরাশ ভাললাগা আর অনেকখানি মন খারাপের মাঝে মনে পড়ল এত যে কমলালেবু পাড়লাম, একটাও তো খেলাম না। কাজেই গাড়িতে যেতে যেতে খাওয়া যাক। খেতে গিয়ে দেখলাম সকলেরই সাইজ প্রায় আমাদের নধরকান্তি পাতিলেবুর মতো। কেউ একটু মোটা, কেউ একেবারেই স্লিম। খোসা এত পাতলা যে ছাড়ানো দায়। মুখে দিয়ে বুঝলাম এর মিষ্টতা চিনিকেও হার মানায়।
সিটং এর সৌন্দর্য, পাহাড়ি মানুষের আন্তরিকতা, এমন সুন্দর একটা হোম স্টে এবং ডিজেল শেরপার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, সব মিলিয়ে যেন এক অনন্য অনুভূতি। একদিনের মধ্যেই সবকিছুই কেমন যেন নিজের হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বেড়াতে গেছি। কিন্তু এত ভরপুর আনন্দ কোথাও পাইনি।
——-
কীভাবে যাবেন?‌
নিউ জলপাইগুড়ি অথবা জংশন থেকে গাড়ি নিয়ে সেবক, লাটপাঞ্চার হয়ে সিটং গেলে আনুমানিক দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। আবার শিলিগুড়ি থেকে রাম্ভি, মংপু হয়েও যাওয়া যায়। দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। আবার কার্শিয়াং থেকে দিলারাম, বাগোড়া হয়ে সিটং এর দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার।

কেন যাবেন?‌
থাকার জন্য বিভিন্ন হোমস্টে ও সিটং চার্চ এর গেস্টহাউস আছে। অজস্র কমলালেবুর বাগান, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বহু পুরনো ব্যাম্বু মনেস্ট্রি ও সিটং লেক এখানকার আকর্ষণীয় জায়াগা। তবে কমলালেবুর আকর্ষণে গেলে, যাওয়ার সেরা সময় আগস্ট থেকে ডিসেম্বর।

কোথায় থাকবেন?‌
ডিজেল শেরপার ইয়াকসা হোমস্টে থাকার পক্ষে খুব ভাল জায়গা। ফোন নম্বর ০৯৭৩৩০৮০৮৬৬। এছাড়াও আরও অন্যান্য হোম স্টে রয়েছে, যেগুলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বুকিং করা যায়। হামরো হোম স্টে- ১৮০০১২৩৩৭৫৯

‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.