হীনমন্যতা ঝেড়ে এশিয়ার জন্য গর্ব করতে শিখুন

জামশিদ নাসিরি

বিশ্বকাপ মানেই যেন ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার লড়াই। এশিয়া আর আফ্রিকা সেখানে যেন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। কেউ তাদের ফেবারিট হিসেবে ধরে না। এমনকি শেষ চারেও তাদের নাম কারও মাথায় আসে না। ভাবখানা এমন, এশিয়া–‌আফ্রিকা খেলছে, এই যথেষ্ট। এরা কী আর করবে?‌ বড়জোর দু একটা ম্যাচ জিতবে। কখনও কোনও বড় দলকে আটকে দেবে। কেউ একটা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে। ব্যাস, এই পর্যন্ত।

কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ সেই মিথকে যেন অনেকটাই ভেঙে দিয়ে গেল। এশিয়া থেকে তিনটি দল পৌঁছে গেল নকআউট রাউন্ডে!‌ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যে একজন এশিয়াবাসী হিসেবে সত্যিই গর্বিত। একসঙ্গে তিনটি দল আগে কখনও এত দুরন্ত ফল করেনি। সেদিক থেকে বলা যায়, এশিয়ার ফুটবলের নতুন জয়যাত্রা শুরু হল। কাতার ছাড়া সব দলই কিন্তু কোনও না কোনও ম্যাচ জিতেছে। আমার দেশ ইরানও চমকে দিয়েছে। একেবারে প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনার মতো দলকে কিনা হারিয়ে দিল সৌদি আরব!‌ জাপান তো আরও বড় চমক দেখাল। তারা শুরুতেই হারিয়ে দিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। আর শেষ ম্যাচে হারাল ২০১০–‌এর চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। গ্রুপ লিগে তিনটির মধ্যে দুটি বড় দলকে হারানো নিঃসন্দেহে বড় একটা সাফল্য। অস্ট্রেলিয়া অন্য মহাদেশ হলেও তারা খেলে এশিয়ার কোটাতেই। তাই তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আসাটাও এশিয়ার সাফল্যই ধরা যায়।

কোনও ছোট দল তথাকথিত বড় দলকে হারিয়ে দিলে বা ড্র করলেই আমরা তাকে ‘‌অঘটন’‌ হিসেবে দেখতে ভালবাসি। সাত পাঁচ না ভেবেই এই সমস্ত জয়ের গায়ে ‘‌অঘটন’‌ তকমা এঁটে দিই। একবারও ভেবে দেখি না, কী দুরন্ত ফুটবল, কী দুরন্ত লড়াইয়ে এই জয় এসেছে। একবারও ভেবে দেখি না, এইসব দেশগুলিও বছরের পর বছর নীরবে প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। একের পর এক শক্ত বাধা পেরিয়ে তারা বিশ্বকাপের মঞ্চে হাজির হয়েছে। এইসব দলের অনেক ফুটবলার ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ক্লাবে দাপিয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। আসলে, পশ্চিমী মিডিয়া এশিয়া বা আফ্রিকার কৃতিত্বকে খোলা মনে কখনই গ্রহণ করতে পারেনি। তাই যখনই তারা হেরেছে, ‘‌অঘটন’‌ বলে বিষয়টাকে লঘু করে দিতে চেয়েছে। বোঝানোর চেষ্টা করেছে, বিষয়টা ফ্লুক।

তাদের মানসিকতা না হয় বুঝতে পারি। কিন্তু দঃখ হয় যখন দেখি, আমরাও নিজেদের সাফল্যকে ঠিকমতো হজম করতে পারি না। আমরাও ওদের সুরে সুর মিলিয়ে ফ্লক, অঘটন এসবই বলে থাকি। একবারও ভেবে দেখি না জাপান বা কোরিয়ার ফুটবলারদের দুরন্ত লড়াইয়ের কথা। এবার বোধ হয় আমাদের সেই হীমন্যতা ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে। আসুন, এশিয়ার এই সাফল্যে আমরাও গর্ব করতে শিখি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.