রক্তিম মিত্র
কয়েক মাস ধরেই অদ্ভুত একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেলকে, বিভিন্ন ইউটিউবারকে পুলিশের নোটিশ পাঠানো। কাউকে দিয়ে কোনও এক থানায় একটা অভিযোগ করানো হচ্ছে। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে থানায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে সেই সাংবাদিকদের।
এটা সেটা নানা অবান্তর প্রশ্ন। মোদ্দা কথা হল, কেন সরকারের সমালোচনা করছেন। মূলস্রোত মিডিয়ার বড় একটা অংশ যেভাবে তাঁবেদারি করছেন। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যে ভাষায় গুণকীর্তন করে চলেছেন, সবাইকেই সেই সুরে কথা বলতে হবে। সত্যিই, পুলিশের আবদারের শেষ নেই।
কখনও ডেকে পাঠানো হয় সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কখনও সফিকুল ইসলামকে। কখনও রাতের অন্ধকারে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। নানা প্রলোভন, নানা হুমকি দেওয়া হয়। ভাবতে ভাল লাগে, এর পরেও তাঁরা বিক্রি হয়ে যাননি। এরপরেও তাঁরা প্রতিবাদের পতাকাটা নিয়েই হাঁটছেন।
একের পর এক ভুলভাল মামলা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কখনও ডেকে পাঠাচ্ছে থানা। কখনও ডেকে পাঠাচ্ছে গুন্ডাদমন শাখা। এই শহরে, এই রাজ্যে এতই গুন্ডার আকাল পড়ে গেছে যে, সন্ময় ব্যানার্জিদের মতো উচ্চশিক্ষিত, সংবেদনশীল, রুচিশীল মানুষদের ডেকে পাঠাতে হচ্ছে। হ্যাঁ, সন্ময়বাবু সমালোচনা করেন। কিন্তু সেই সমালোচনা করতে গিয়ে মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন না। তিনি জানেন, কোনটা বলতে হয়, কোনটা বলতে নেই। তিনি জানেন, কোন সমালোচনা কীভাবে করতে হয়। তাঁর ভাষা যথেষ্ট পরিশীলিত ও মার্জিত।
শফিকুলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হয়। তিনিও বেশ জানেন সাংবাদিকতার এথিক্স। নিয়ম মেনেও প্রতিবাদ করা যায়, শালীন ভাষাতেও বিরোধীতা করা যায়, দু তিন বছর ধরে তিনি এই বার্তা রেখে আসছেন। সস্তা হাততালি পাওয়ার জন্য কোনও চটুল উপস্থাপনার আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি। বিস্ফোকর শিরোনাম দিয়ে বিভ্রান্ত করতে দেখা যায়নি। জেলা, মফস্বল থেকেও যে মূলস্রোড মিডিয়াকে টেক্কা দেওয়া যায়, তা সফিকুল দেখিয়ে দিয়েছেন।
সেই সফিকুলকে ডেকে পাঠিয়ে কীসব অবান্তর প্রশ্ন। পুলিশ নিজেকে কোথায় আর নামাবে? কেন সরকারের সমালোচনা করছেন? কেন কার্নিভালকে টাকার অপচয় বলছেন? কার্নিভাল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিরাট ইভেন্ট হতেই পারে। কিন্তু সবাইকে ধন্য ধন্য করতে হবে, এ আবার কেমন কথা? রাজ্যবাসীর করের টাকায়, সরকারি অর্থে এই অনুষ্ঠান। কারণ মনে হতেই পারে, এটা অপচয়। তার জন্য পুলিশ থানায় ডেকে পাঠাবে? চাটুকারিতা করতে করতে যুক্তিহীনতার কোন স্তরে পুলিশ নেমে গেছে, ভাবতেও লজ্জা হয়,।
যে থানা ডেকে পাঠাচ্ছে, তাঁরা হয়ত নিয়ম পালন করছেন। এটা যে তাঁদের সিদ্ধান্ত নয়, সেটা পরিষ্কার। প্রশ্ন হল, সফিকুলদের ডেকে পাঠাতে হবে, এই নির্দেশ কে বা কারা দিচ্ছেন? এই নির্লজ্জ চাটুকারিতা কাকে খুশি করার জন্য? শফিকুলরা দিনের শেষে বাড়ি ফিরবেন। গর্ব করে, মাথা উঁচু করেই চলবেন। কিন্তু জেরার ভিডিও যদি সামনে আসে, এই পুলিশ সমাজে মুখ দেখাতে পারবে তো? যদি সত্যিই ক্ষমতা থাকে, এই জেরার ভিডিও সামনে আনা হোক। তারপর এই পুলিশ কর্মীরা নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যান। নিজের স্ত্রী বা সন্তানের দিকে তাকান। দেখবেন, তাঁদের চোখেও একরাশ ঘৃণা জমে আছে।