ঘৃণাটুকু বাঁচিয়ে রাখুন, যেখানে সেখানে প্রয়োগ করবেন না

ধীমান দাশগুপ্ত

আচ্ছা, ওঁরা কি হাতে অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন?‌
ওঁরা কি ভাঙচুর চালাতে পারতেন?‌
ওঁরা নিশ্চয় মাঝরাতে পর্ষদ অফিসে ঢুকে সব নথি লোপাট করে দিতেন‌!‌

ওঁদের সম্পর্কে এর কোনওটাই বলা যাবে না। তবু ওঁদের সরিয়ে দেওয়া হল। একেবারে মাঝরাতে।

ওঁদের অপরাধ?‌ ওঁরা টেট উত্তীর্ণ। ওঁরা অবিচারের শিকার। ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আস্থা রেখেছিলেন।
এই আন্দোলন হঠাৎ করে শুরু হয়নি। চোখের সামনে শিক্ষা দপ্তর, প্রাইমারি, এসএসসিকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। এর জন্য সিবিআই লাগে না, ইডি লাগে না। সাদা চোখেই দেখা যায়।

রামবাবু প্রভাব খাটিয়ে দু–‌একজনকে ঢুকিয়ে দিলেন, শ্যামবাবু দুই আত্মীয়কে একটু বেশি নম্বর পাইয়ে দিলেন, ব্যাপারটা এমনও নয়। একেবারে দিনদুপুরে ডাকাতি বলতে যা বোঝায়, তাই। একেবারে সংগঠিত অপরাধ বলতে যা বোঝায়, তাই।

তারপরও দিনের পর দিন হাত গুটিয়ে থাকল প্রশাসন। উল্টে সেই অপরাধ যেন আরও সংগঠিতভাবে সম্পন্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করাই যেন প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়াল প্রশাসনের।

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এসে আশ্বাস দিলেন। ভোট পেরোতেই যথারীতি ভুলেও গেলেন। এমন এক কমিটি বানানো হল, যে কমিটির কাজ হয়ে দাঁড়াল এই দুর্নীতিকে আরও মসৃণ করে তোলা। আরও শৃঙ্খলিত করে তোলা। ইডি খুব সামান্য তথ্যই সামনে এনেছে। মিডিয়া তো রেখেঢেকে খুব অল্পই সামনে এনেছে। তাতেই যা সব বেরিয়ে আসছে, চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। এ তো শুধু হিমশৈলের চূড়া। আসলে, এর বিস্তার কতখানি।

ভাবতে অবাক লাগে, এরপরও প্রশাসনের মাথারা লজ্জিত হন না। এরপরও তাঁরা এই অপরাধীদেরই পক্ষ নেন। এরপরও তাঁরা প্রমাণ লোপাট করতেই ব্যস্ত থাকেন। এরপরেও তাঁরা গলা চড়াচ্ছেন। এরপরেও ঘটা করে বিজয়া সম্মেলনী করছেন। কেউ বলছেন, এমনটা আগেও হত। কেউ বলছেন, অপরাধ এখনও প্রমাণিত নয়। কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মানবিক।

রাতের বেলায় পুলিশি এসকর্টে বস্তা বস্তা টাকা এল। নিরাপদে ক্রিমিনালদের বাড়িতে ঢুকে গেল। রাতবিরেতে কোনও এক ভাইপোর কোনও এক বউকে ছাড়াতে গোটা বিধাননগর কমিশনারেট হাজির হয়ে যায় এয়ারপোর্টে। পুরভোটে একের পর এক বুথ যখন লুঠ হয়, তখন এই পুলিশ নির্লজ্জের মতো মুখ লুকোয়। অথচ, যোগ্য–‌বঞ্চিত প্রার্থীরা শান্তিপ্রিয়ভাবে আন্দোলন করলে তাঁদের মাঝরাতে চ্যাংদোল্লা করে গাড়িতে তোলে। সন্তান–‌সহ মাকে মাঝরাতে অন্য কোথাও নামিয়ে দেয়।

দোষটা কি শুধু পুলিশের?‌ বিশেষ কোনও জায়গা থেকে নির্দেশ না এলে মাঝরাতে পুলিশ কি এভাবে মহিলাদের তুলতে পারত?‌ বিশেষ কারও প্রশ্রয় ছাড়া বছরের পর বছর ধরে এই লুঠতরাজ চালিয়ে যাওয়া যেত?‌ কোন আশ্বাসটা মানবিক, আর কোনটা প্রতারণা, এই তফাতটুকুও কি আমরা করতে ভুলে গেছি?‌ শুধু শুধু পুলিশকে গালাগাল দিয়ে আপনার ক্রোধকে অন্যদিকে চালিত করছেন না তো?‌ যদি ঘৃণা করতেই হয়, লক্ষ্য স্থির করুন।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.