আগে উত্তমের ছবি, সেখান থেকে হিন্দি ছবি

হিন্দি ছবির দুনিয়ায় খুব একটা সফল হতে পারেননি। আসমুদ্র হিমাচল হয়ত তাঁকে সেভাবে চিনল না। বাঙালির মহানায়ক হয়েই থেকে গেলেন। কিন্তু যাঁরা চেনার, চিনতেন। অনুসরণ করতেন। তাই তাঁর অভিনীত বাংলা ছবিই কয়েক বছর পর হিন্দিতে হয়েছে। তাতে অভিনয় করেছেন দিকপাল অভিনেতারা। লিখেছেন বৃষ্টি চৌধুরি।

সেই কতকাল আগে মহামতী গোখলে বলে গিযেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা ভাববে আগামীকাল। সে এক সময় ছিল। সাহিত্য থেকে সিনেমা, খেলা থেকে গানবাজনা, সব ব্যাপারেই বাঙালি যেন অগ্রণী ভূমিকা নিত। তাকেই অনুসরণ করত গোটা দেশ।

সেই ব্যাপারে পথ দেখিয়ে গেছেন মহানায়ক। তিনি নিজে হয়ত হিন্দি ছবিরু দুনিয়ায় খুব একটা সফল হতে পারেননি। আসমুদ্র হিমাচল হয়ত তাঁকে সেভাবে চিনল না। বাঙালির মহানায়ক হয়েই থেকে গেলেন। কিন্তু যাঁরা চেনার, চিনতেন। অনুসরণ করতেন। তাই তাঁর অভিনীত বাংলা ছবিই কয়েক বছর পর হিন্দিতে হয়েছে। তাতে অভিনয় করেছেন দিকপাল অভিনেতারা।

 

এখানে কয়েকটি নুমনা তুলে ধরা যাক। পাঁচের দশক ও ছয়ের দশকে উত্তম কুমারের বেশ কিছু ছবি হিন্দিতে হয় একই নামে, অথবা অন্য নামে মুক্তি পায়। যেমন উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সবার উপরে’ ছবিটির কথা নিশ্চয় মনে আছে। ঠিক তিন বছর পর (১৯৫৮) বেরোলো দেবানন্দের কালা পানি। দুটো ছবি পরপর দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

১৯৫৫ সালে উত্তম কুমারের আরেকটি ছবি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বিমল মিত্রর লেখা ‘সাহেব বিবি গোলাম’। সাত বছর পর হিন্দিতেও সেই ছবি তৈরি হল। নায়ক গুরু দত্ত। ১৯৫৫ তেই আরও একটি ছবি খুব হিট করেছিল। উত্তম-সুচিত্রার অগ্নি পরীক্ষা। বারো বছর পর সেই ছবি এল বলিউডে। সেটা অবশ্য উত্তম কুমার নিজেই করেছিলেন। সঙ্গী বৈজয়ন্তীমালা। ছবির নাম? ছোটি সি মুলাকাত।

 

১৯৬৭ তে উত্তম-সুপ্রিয়ার জীবন মৃত্যু ছবির কথা মনে পড়ছে? অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছিল এক ব্যাঙ্ক কর্মীকে। সেই অভিযোগে জেল খাটেন। পরে সর্দারজির ছদ্মবেশে ফিরে আসেন, সেই ষড়যন্ত্রীদের সায়েস্তা করেন। হ্যাঁ, সেই কাহিনী নিয়ে হিন্দিতেও ছবি হয়েছিল। উত্তম কুমারের পরিবর্তে ছিলেন ধর্মেন্দ্র। এক্ষেত্রে ছবির নাম বদল হয়নি। জীবন মৃত্যুই রাখা হয়েছিল।
বাংলায় লাল পাথর ছবিটা তেমন চলেনি। টিভিতেও খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ১৯৬৩ তে তৈরি সেই ছবিকে নিয়ে পরে হিন্দি ছবি হয়েছিল। ছবির নাম লাল পাত্থর। এক্ষেত্রে উত্তমের জায়গায় ছিলেন রাজ কুমার।

উত্তম আর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাবল রোল। ঠিক ধরেছেন। ভ্রান্তি বিলাস। সেক্সপিয়ারের কাহিনি নিয়ে বাংলায় তৈরি ছবি বেশ সাড়া ফেলেছিল। এখনও মাঝে মাঝেই টিভিতে দেখা যায় ছবিটি। এই কাহিনী নিয়েই ছবি করেছিলেন গুলজার। বারবার উত্তম–‌সাবিত্রী–‌ভানুর ওই ছবি দেখেছেন। নিজেও একাধিক সাক্ষাৎকারে সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। হিন্দিতে তৈরি হল আঙ্গুর। উত্তমের জায়গায় সঞ্জীব কুমার। আর ভানুর বদলে দেবেন বর্মা।

আরও একটি হাসির ছবি। ছদ্মবেশী। বেরিয়েছিল ১৯৭১ সালে। চার বছর পর সেই ছবি হল হিন্দিতে- চুপকে চুপকে। পরিচালক হৃষীকেশ মুখার্জি। উত্তমের ভূমিকায় ধর্মেন্দ্র, আর শুভেন্দুর ভূমিকায় অমিতাভ বচ্চন। অমিতাভ ও ধর্মেন্দ্র দুজনেই বেশ কয়েকবার ছবিটি দেখেন। ধর্মেন্দ্র এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, উত্তম কুমারের চরিত্রটি দেখার পর তাঁর কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। চরিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এবং তিনি একথাও অকপটে স্বীকার করেন, উত্তম কুমার ওই চরিত্রটিকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে সেই উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।

 

সাতের দশকে আরেক ত্রিকোণ প্রেমের ছবি। আমি সে ও সখা। হিন্দি ছবির নাম বেমিসাল। এক্ষেত্রে উত্তমের জায়গায় অমিতাভ। আরও দুটি জনপ্রিয় ছবি। দুটির পরিচালকই বাঙালি। দুটিই একই নাম নিয়ে হিন্দিতে হয়েছিল। দুটিতেই নায়ক সেই উত্তম কুমার। ঠিক ধরেছেন, অমানুষ ও আনন্দ আশ্রম। দুটি ছবিরই পরিচালক শক্তি সামন্ত। আগে বাংলায়, পরে হিন্দিতে হয়েছিল।

সাতের দশকের আরেক সুপারস্টার রাজেশ খান্না! তিনিও উত্তমের জুতোয় পা গলিয়েছেন। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি ছবি নিশিপদ্ম। কয়েক বছর পর এটাও হিন্দিতে হয়েচিল। নাম অমর প্রেম। অভিনয়ে ? রাজেশ খান্না।

এইসব ছবিতে প্রত্যক্ষভাবেই থেকে গেছেন উত্তম কুমার। আরও অনেক ছবি আছে, যেখানে সরাসরি হয়ত নেই। তবে সেই ছায়াটা থেকে গেছে। এখনও বলিউডে বেশ কিছু ছবি তৈরি হচ্ছে, যার সঙ্গে ছয়ের দশক বা সাতের দশকে তৈরি বাংলা ছবির নানা মিল থেকে গেছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, বলিউডের উপর মহানায়কের প্রভাব কতটা। তিনি নিজে হিন্দিতে কী কী ছবি করেছেন, কতটা সফল হয়েছেন, এটাই তাঁর একমাত্র মানদণ্ড নয়। তার বাইরেও বলিউডে একটা প্রভাব থেকে গেছে। যা খুঁজতে হয় দেবানন্দ, অমিতাভ, ধর্মেন্দ্রদের চরিত্রগুলির মধ্যে।

&&&&&&&&&&&&&&

&&&&&&&&&&&&&&

***********

মহানায়ক উত্তম কুমারকে নিয়ে বেঙ্গল টাইমসের বিশেষ সংখ্যা— এখনও উত্তম।

পুরো বইটি পড়ুন। ভাল লাগলে অন্যদের শেয়ার করতে পারেন।

(‌পিডিএফ ফাইলটি আপলোড করা হল। নীচের ওয়েব লিঙ্কে ক্লিক করলেই খুলে যাবে। প্রচ্ছদের ছবিতে ক্লিক করলেও ম্যাগাজিনটি খুলে যাবে। সেখান থেকেও পড়তে পারেন।)‌

https://bengaltimes.in/wp-content/uploads/2022/07/MAHANAYAK-SPECIAL.pdf

***

https://bengaltimes.in/wp-content/uploads/2022/07/MAHANAYAK-SPECIAL.pdf

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.