দোহাই, আর কেউ সিবিআই চাইবেন না

রক্তিম মিত্র

শোনা যায়, শিল্পাঞ্চল থেকে বস্তায় ভর্তি টাকা আসত। পুলিশ এসকর্ট করে সেই টাকা বিশেষ জায়গায় পৌঁছে দিত।

শোনা যায়, যাঁরা এই কয়লা বা গরুর কারবারের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সবার সঙ্গেই বিশেষ একজনের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা আছে।

শোনা যায়, যাঁরা ফেরার হয়ে বিদেশে চলে গেছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে বিশেষ কারও স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়।

শোনা যায়, সেই প্রভাবশালীর মাথায় তাঁর থেকেও বড় প্রভাবশালীদের হাত আছে। কোনওটা অপত্য স্নেহের হাত। আবার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে যাঁদের নামে তিনি গাল পাড়েন, তাঁরাও নাকি আড়ালে বেশ ‘‌স্নেহশীল’‌। তিনি বিপদে পড়লে প্রমাণ লোপাটের দায়িত্বও নাকি তাঁরাই নিয়ে নেন।

সবই শোনা যায়। সত্যি–‌মিথে বলা মুশকিল।

মাঝে মাঝেই কাগজে দেখা যায়, সামনের সপ্তাহ থেকেই সক্রিয় হচ্ছে সিবিআই। অমুককে জেরা করবে সিবিআই। তারপরই শোনা যায়, সেই লোকটি বেপাত্তা। তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকমাস পর শোনা যায়, সে নাকি বিদেশে চলে গেছে। লুক আউট নোটিশ জারি হয়েছে।

গত এক দেড় বছর ধরে এইসব জল্পনা শুনে, পড়ে আমরা অভ্যস্থ। কোনও এক সাব ইনস্পেক্টর, কোনও এক ইসিএল আধিকারিক, কোনও এক মামুলি পাচারকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমন ভান করা হয়, যেন এবার সব কিনারা হয়ে যাবে। প্রভাবশালীদের খোঁজ চলছে।

বিস্তর গবেষণা করিয়া গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন যে, গরু ঘাস খায়। এত ঢক্কানিনাদের পর যে চার্জশিট, তাতে ৪১ জনের নাম রয়েছে। অধিকাংশই চুনোপুঁটি। আসল নামগুলোই নেই।

অনেকে হয়ত অবাক হচ্ছেন। কিন্তু সিবিআই নামক অপদার্থ প্রতিষ্ঠানটির কার্যপ্রণালী সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম ধারণাও আছে, তাঁদের অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। আসল লোকেদের ছাড় দিতে হবে বলেই নকল লোকেদের নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করতে হয়।

বলা যেতেই পারে, তাহলে কেন লোকদেখানো এই জেরা?‌

আসলে, যাঁদের এইসব জেরায় ডাকা হচ্ছে, তাঁরা দিব্যি জানেন, এই সিবিআই বাবুদের টিকিটা কোথায় বাঁধা আছে। তাই তাঁদের যতই যোগ্যতা থাকুক, তাঁরা যে বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারবেন না, এমনকী সময়মতো চার্জশিটটাও দিতে পারবেন, এটুকু তাঁরা বোঝেন। অর্থাৎ, সিবিআই নামক বস্তুটির ওপর তাঁদের অগাধ আস্থা। তাই ডাকলেও তাঁরা যান না। কারণ, জানেন কিছুই হবে না। জেরা থেকে বেরিয়েও তাঁরা বীরদর্পে ভাষণ দেন। জানেন, এঁদের মুরোদ কত। তাই জনসভায় দাঁড়িয়ে বা প্রেস কনফারেন্সে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারেন, সিবিআই কিছুই করতে পারবে না।

নিশ্চিত থাকুন, এসএসসি নিয়ে যেসব রোমহর্ষক তৎপরতা দেখছেন, এক্ষেত্রেও পর্বতের মুষিক প্রসবই হবে। ছোট খাটো কেষ্ট বিষ্টু থাকলে হয়ত ধরা পড়তেন। কিন্তু এখানেও সেই ‘‌অদৃশ্য প্রভাবশালী’‌। তাই একটা সময়ে গিয়ে সব তৎপরতা থেমে যাবে। বিশ্বাস না হলে কটা মাস না হয় অপেক্ষা করুন।

একটা প্রতিষ্ঠানের নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। কখনও সাফল্য আসে, কখনও আসে না। কিন্তু এমন সীমাহীন ব্যর্থতা এই দেশে আর কোনও প্রতিষ্ঠানের আছে বলে মনে হয় না।

দয়া করে সেটিং–‌সেটিং করে চিৎকার করবেন না।

এই আপনিই কিন্তু কোনও একটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের রায়ে দিলে উল্লসিত হয়েছেন।

দোষটা তাঁদের নয়। দোষটা আসলে আপনার। গত কয়েকবছরের এত ঘটনাক্রম দেখেও যদি সিবিআই নামক বস্তুটির ওপর ভরসা থেকে থাকে, তাহলে সেই দায় একান্তই আপনার।

শিক্ষা হয়েছে তো?‌ যদি হয়ে থাকে, তাহলে আর সিবিআই–‌সিবিআই করে দাঁত কেলিয়ে চিৎকার করবেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.