দাও ফিরে সে ঝাউবন, লহ এ ‘‌উন্নয়ন’‌

সন্দীপ লায়েক
শুরুতেই বলে রাখি, সরকার বিরোধিতা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আসলে আমি আজ অত্যন্ত বিরক্ত। হতাশও বটে। এক ভদ্রলোকের বকখালি সংলগ্ন হেনরিজ আইল্যান্ডের ছবি দেখে কলম না ধরে পারলাম না। হয়ত পাগলের প্রলাপ লিখছি কিছু মনে করবেন না।

সত্যি কথা বলতে কি আমরা ভারতীয়রা বাঁচার প্রতিটি পদক্ষেপে রাজনীতিকে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ফেলেছি। মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট প্রচার দেখে নিজেদের সহনশীল করে তুলেছি। সোশাল সাইটে নিজের স্টেটাস না দিলে ঘুমের ব্যঘাত বানিয়ে ফেলেছি।

henry island
এই দেখুননা বছর চার আগে পর্যন্ত বকখালির সন্নিকটে হেনরিজ আইল্যান্ড জায়গাটি বড়ই মনোরম ছিল। ওয়াচ টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের ঘন বন দেখে যার খারাপ লাগতো তিনি আর যাই হন না কেন, ভ্রমন রসিক বা প্রকৃতি প্রেমিক নন। ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমুদ্রের দিকে হেঁটে যাওয়ার পথটিও ছিল চিরস্মরণীয়। পথের চারদিকে ফুটন্ত লাল জবার মত লাল কাঁকড়ার দল। ঝোপ পেরিয়ে আদি অকৃত্রিম মনভোলানো সমুদ্রের রূপ..আহা।
আজ ওই ভদ্রলোকের ছবিদেখে মনে হল কোন দু: স্বপ্ন দেখছি। একি হাল হয়েছে জায়গাটার? উন্নয়নের নাম দিয়ে ঝোপ জঙ্গল কেটে পাকা রাস্তা বানানো হচ্ছে। লাল কাঁকড়ার দল আজ ঘরছাড়া।

একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঝাউ বন।
একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঝাউ বন।

আচ্ছা আজ যদি আপনার বাড়ির পরিবারের সমস্ত সদস্যকে খুন করে সোনার পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়, কেমন লাগবে আপনার? ভাল লাগবে না, তাই তো? সেই এক জিনিস আমরা করে চলেছি প্রকৃতির সঙ্গে। এটা কি অসহিষ্ণুতা নয়?

আচ্ছা উন্নয়ন মানে কি সব কেটে ফেলে কংক্রিট বানিয়ে দেওয়া? আমি অন্তত তা বুঝি না। আমি উন্নয়ন বলতে বুঝি প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে মানুষের সামগ্রিক জীবন যাত্রার উন্নয়ন, মানসিকতার উন্নয়ন।
এইতো মাত্র বছর চার আগে রিসপ গিয়েছিলাম, দারুণ লেগেছিল। বনের মধ্যে পাহাড়ের গায়ে কয়েকটি হোটেল। আজ সেখানে জঙ্গল সাফ হয়ে হোটেলে হোটেলে ছয়লাপ।
মনেপড়ে সেই ছোট্টবেলার দীঘাটা? ঝাউবনে হইহই করে পিকনিক হত দীঘায়! পথ মসৃণ হল, গেট লাগানো হল কিন্তু বলুনতো সেই ঝাউবনগুলো কোথায় গেল?
ভেবে দেখুন বনের সেই জন্তুগুলোকে? যাদের দেখার জন্য আমাদের কি আদিখ্যেতা! বনের গভীরে সাফারির চাপে আর হোটেলের ভীড়ে তারাও আজ ঘরছাড়া। প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত।
আমরা যারা প্রকৃতির সান্নিধ্য পছন্দ করি এই প্রকৃতির এই মিথ্যে উন্নয়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি না? কমসেকম মোমবাতির মিছিল? কারণে আকারণে রাজনীতি তো অনেক করলাম …এটুকুর জন্য রাজনীতি ভুলতে পারি না? কমসেকম একটা ভালো পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারি না?
…ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন। না হলে বেড়ানোর কথা ভুলে যান। ঘর বাড়ি অফিস সবই তো কংক্রিটের উন্নয়ন। বেড়ানোর প্রিয় জায়গাটিও যদি কংক্রিটে পরিণত হয় আপনার মন ভরবে তো?

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.