বছরের শুরুটাই হয়েছিল দুরন্ত জয় দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ জয় খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। তাও আবার অধিনায়ক বিরাট কোহলি–রোহিত শর্মাদের ছাড়াই। বিরাট অস্ট্রেলিয়া গেলেও একটি টেস্ট খেলেই ফিরে আসেন। রোহিত শর্মা শেষপর্বে গেলেও তেমন ভূমিকা ছিল না। গোটা দলটাই যেন কার্যত হাসপাতালে পরিণত হয়েছিল। নেট বোলার হিসেবে যাওয়া ক্রিকেটারও ফিরে এসেছেন টেস্ট খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি নিয়ে। ২০০৩ নাগাদ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। অল্পের জন্য সেই জয় হাতছাড়া হয়। কিন্তু এবার রাহানের নেতৃত্বে সেই অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, বছরের শুরুটা দারুণভাবেই হয়েছিল।
কিন্তু তারপর বরং তেমন সাফল্যের দেখা নেই। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানোর মধ্যে বিরাট কোনও কৃতিত্ব ছিল না। নিজের দেশে, স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে সিরিজ জেতার পরম্পরাটা অনেক পুরনো। বরং, সেই তুলনায় বছরের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে গিয়ে সিরিজে এগিয়ে থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত সবথেকে হতাশ করেছে টি২০ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের আগেই নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা করে দিলেন বিরাট কোহলি। প্রথম ম্যাচেই শোচনীয় হার পাকিস্তানের কাছে। এই প্রথম বিশ্বকাপে ভারত হারল পাকিস্তানের কাছে। পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু চাপের আবহ থেকে বেরোতেই পারল না ভারত। ফলে, হারতে হল নিউজিল্যান্ডের কাছে। প্রথম দুই হারের ধাক্কা যে সামলে ওঠা যাবে না, জানাই ছিল। ফল যা হয়! পরের তিন দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিতলেও শেষমেশ হতাশ আর নিষ্ফলের দলেই থাকতে হয়েছে ভারতকে। একেবারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়।
ঘরের মাঠে আইপিএল শুরু করেও শেষ করা গেল না। তথাকথিত ‘বায়ো বাবল’ এর ভেতর করোনার সংক্রমণ। মাঝপথেই থামিয়ে দিতে হল। শেষবেলায় বাকি অংশটুকু হল আরব দেশে। বুড়ো হাড়েও ভেলকি দেখালেন এম এস ধোনি। আবার চ্যাম্পিয়ন করলেন চেন্নাই সুপার কিংসকে।
এ তো গেল খেলার কথা। মাঠের বাইরের নানা ঘটনাক্রমও বেশ সাড়াজাগানো। দীর্ঘদিন ব্যাটে তেমন বড়সড় রান নেই। বছরভর নানা বিতর্ক তাড়া করেছে বিরাট কোহলিকে। টি২০ বিশ্বকাপের আগে নিজেই নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন। আইপিএলে নেতৃত্বে থাকবেন না, তাও ঘটা করে ঘোষণা করেছেন। বছরের শেষলগ্নে নির্বাচকরা জানিয়ে দিলেন, একদিনের ক্রিকেটেও বিরাটের নেতৃত্ব থাকছে না। সাদা বলের ক্রিকেটে নেতা হিসেবে সিলমোহর পড়ে গেল রোহিত শর্মার নামে। এই ঘরানায় নেতা হিসেবে বিরাটের ফিরে আসার আর কোনও সম্ভাবনা রইল না। এই নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হওয়ার আগে বিরাট জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গে নেতৃত্বের বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। দল নির্বাচনী সভার আগে শুধুমাত্র জানানো হয়েছিল। অন্যদিকে, বোর্ড পাল্টা বিবৃতির লড়াইয়ে না গেলেও বুঝিয়ে দিয়েছে, সাদা বলের ক্রিকেটে দুজন নেতা থাকবেন না।
এতদিন দলের কোচ ছিলেন রবি শাস্ত্রী। তাঁর মেয়াদ বিশ্বকাপের পরই শেষ। মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে বোর্ড কোনও আগ্রহই দেখায়নি। নিঃশব্দে ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে। বছরের শুরুতে ছিল শাস্ত্রী–কোহলি জুটি। বছরের শেষ লগ্নে সেটাই যেন বদলে গেল রাহুল–রোহিত জুটিতে। নিঃশব্দে যেন বদলে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের ভরকেন্দ্র।