সোহম সেন
অধিনায়ক আর প্রশাসকের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থাকেই। এমনকী, একসময়ের অধিনায়ক যদি পরবর্তীকালে প্রশাসনেকর ভূমিকায় উঠে আসেন, তাহলেও সেই বিরোধ থেকেই যায়। অধিনায়ক হিসেবে তিনি যেটা করতেন, যেটা চাইতেন, প্রশাসক হিসেবে তার উল্টোটাই করেন। একই ঘটনা সৌরভ গাঙ্গুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অধিনায়ক থাকার সময় সৌরভ চাইতেন, ক্রিকেট সংক্রান্ত সব ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করুন বোর্ডকর্তা ও নির্বাচকরা। গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করে আনার পেছনে সবথেকে বেশি ভূমিকা ছিল সৌরভেরই। তিনি গ্রেগকে কোচ করতে চেয়েছিলেন বলেই বোর্ড সিলমোহর দিয়েছিল। আইপিএলের ক্ষেত্রেও তাই। সৌরভের সম্মতি ছিল বলেই বুকানন বা ডেভ হোয়াটমোরকে কোচ করে আনা হয়েছিল। কিন্তু বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটল না।
বিশ্বকাপের দলে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে মেন্টর করে আনার সময় কি বিরাট কোহলির মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল? নিশ্চিতভাবেই হয়নি। হয়ত আলোচনা হয়েছিল। বিরাটের সামনে মেনে নেওয়া ছাড়া হয়ত উপায় ছিল না। হয়ত সেই গোঁসা থেকেই বিশ্বকাপের পর টি২০–র নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা করে দিলেন। বিশ্বকাপ পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটে রাহুল দ্রাবিড়কে কোচ করার ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা। এক্ষেত্রে তো কোহলির সঙ্গে ন্যূনতম আলোচনাটুকুও করা হয়নি। কোহলি নিজেই এমনটা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।
কেউ কেউ বলতেই পারেন, রাহুলকে কোচ করা হবে, বোর্ডের তরফ থেকে তো এমন কোনও ঘোষণা হয়নি। কথাটা ভুল নয়। আবার ঠিকও নয়। কারণ, ঘোষণা না হলেও রাহুলই যে কোচ হচ্ছেন, তা বুঝতে আর কারও বাকি নেই। সারা দেশের মিডিয়া রাহুলকে প্রায় কোচ বানিয়েই দিল। বোর্ডসূত্রকে উদ্ধৃতও করল। বোর্ডের দিক থেকে তো কোনও রিজয়েন্ডার এল না। কোনও পদাধিকারী তো একবারও বললেন না যে এটা ভুয়ো খবর।
ঘটা করে কোচ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হল। কমিটি তৈরি হবে। একটা লোকদেখানো ইন্টারভিউ হবে। তারপর লোকদেখানো একটা সুপারিশ। এতসব নাটক এরপর মঞ্চস্থ হবে। মাঝখান থেকে অন্ধকারে রইলেন শুধু বিরাট কোহলি। সত্যিই কি একজন অধিনায়কের এই উপেক্ষা প্রাপ্য? সৌরভ গাঙ্গুলি যদি অধিনায়ক হতেন আর তাঁকে যদি এভাবে উপেক্ষা করা হত, তাহলে কি তিনি মেনে নিতেন? অথচ, এখন তিনি প্রশাসক। এখন তিনি যেটা চাইবেন, সেটাই আইন। তাই অধিনায়কের মতামতের গুরুত্ব নেই। এমনকী মতামত চাওয়াও হয় না।
রাহুল কেমন কোচ হবেন, সে ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটা নিতান্তই লোকদেখানো। এবং পুরো প্রক্রিয়ায় যেভাবে কোহলিকে উপেক্ষা করা হল, এটাও কাম্য ছিল না।