কুণাল দাশগুপ্ত
মতি নন্দী থাকলে নিশ্চয় বড় খুশি হতেন। পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি একটা ‘গোলা’ ছবি উপহার দিলেন বাঙালির সেরা উৎসবে সেরা খেলা নিয়ে। ‘গোলোন্দাজ’ কিন্তু শুরুতেই পাঁচ গোল মেরে দিল বাজার চলতি তেঁতুলের আচার মার্কা ছবিগুলোকে।
নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে নিয়ে ছবি বানানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিষয়টা মোটেও জলবৎ তরলং নয়। বাংলায় ফুটবলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায় তাই দিয়ে ছবি হয় না। স্বল্প দৈর্ঘের ছবি হতে পারে। আসলে, তখন ফুটবল নিয়ে বা তার ইতিহাস নিয়ে সেই পর্যায়ের গবেষণা হয়নি। পরে যখন কেউ কেউ এই কাজে হাত দিলেন, তখন সেই ইতিহাস নির্মাণকারী মানুষগুলোই হারিয়ে গেছেন। এমনকী, তাঁদের কাছের মানুষেরাও নেই। ফলে, কিছুটা শোনা কথা, কিছুটা কল্পনা, লেখালেখিতে এগুলোই ডালপালা মেলেছে। ছবি তৈরির সময়ও কিছু গল্পের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাতে বাস্তব কতটা নড়ে গেছে বলতে পারব না। কিন্তু ফুটবল যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের তৃষ্ণা যে মিটেছে সে বিষয়ে সংশয় নেই।
প্রশ্ন থাকতে পারে, ট্রেডস কাপের ফাইনালে এত ঘটনার ঘনঘটা আদৌ হয়েছিল কিনা সেই নিয়ে। মাঠের মধ্যে গান গাওয়া নিয়ে বা ফাইনালের দিন খুন–খারাপি নিয়েও সংশয় আসাটাই স্বাভাবিক। ফুটবলে যে ড্রিবলিং দেখানো হয়েছে, তার অনেকগুলোই সেই সময় হত কিনা সন্দেহ আছে। প্রামাণ্য ইতিহাসের পাশাপাশি একটু অতি নাটকীয়তা হয়ত আছে। হয়ত কেন, নিশ্চিতভাবেই আছে। এই ছবিতে হয়ত তার প্রয়োজনও ছিল। যেখানে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, সেখানে একটু কল্পনার রঙ মেশানো তেমন দোষের কিছু নয়। অন্তত সিনেমার ক্ষেত্রে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা উচিত।
অভিনয়ে নজর কেরেছেন শ্রীকান্ত আচার্য। নগেন্দ্রপ্রসাদের বাবা সূর্যকুমার সর্বাধিকারীর ভূমিকায় বেশ সাবলীল অভিনয় করলেন। যেমন গান করেন ঠিক তেমনই। দেবের আন্তরিকতাও প্রশংসার দাবি রাখে। ব্রিটিশদের ভূমিকায় নাম না জানা শিল্পীরা এবং জমিদারের চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অভিনয়ও নজরকাড়া। ছোট্ট চরিত্রে মাত করলেন ক্রীড়া সাংবাদিক (এবং প্রাক্তন ফুটবলার) দুলাল দে। বারে বারে ‘ধন্যি মেয়ে’র রবি ঘোষের কথা মনে পড়ছিল। বিশেষ করে তার ‘জয় গুরু’ শব্দ দুটো অন্য একটা ব্যঞ্জনা এনে দিল। দুলালই ছবিতে ফুটবলের অনুশীলন থেকে খেলার খুঁটিনাটি হাতে ধরে শিখিয়েছেন। কাহিনি নির্মাণ ও চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা আছে। বছর দশেক আগে মোহনবাগানের শিল্ডজয় নিয়ে ‘এগারো’ বলে একটা ছবি তৈরি হয়েছিল। মাঝের দশ বছরে আর তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। টুকিটাকি যেটুকু হয়েছে, সেখানে ফুটবল ছিল গল্পের শাখা হিসেবে। সেদিক থেকে ফুটবল মনষ্ক বাঙালির একটা খিদে ছিলই। সেই খিদে অনেকটাই মিটিয়ে দিল গোলন্দাজ। ক্রিকেট নিয়ে যদি একটা ‘লগান’ হয়, ফুটবল নিয়ে একটা গোলন্দাজ হতেই পারে।
গানের বিষয়ে বলতে হয়, সে আমলের সুর কিন্তু ছিল না। তবে নায়কের তিন তলা বাড়ি টপকে মশা মারার মতো ভিলেন মারা যদি মেনে নিতে পারি, তবে এটুকু মানতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
গোলোন্দাজ বক্স অফিসে বোমা ফাটাবেই। আর পিছনে মহম্মদ হাবিব হয়ে থেকে যাবেন দুলাল দে।