প্রসূন মিত্র
আবার সেই ধন্য ধন্য রব। মুখ্যমন্ত্রী নাকি পরিত্রাতা। একেবারে শেষমুহূর্তে আবার তিনি বাঁচিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। কর্তারা ধন্য ধন্য করছেন। প্রাক্তনরাও গদগদ। আর মূলস্রোত মিডিয়াও যথারীতি ধন্য ধন্য রবে মেতে আছে।
মুখ্যমন্ত্রী নাকি তিন মিনিটেই সমাধান করে দিলেন। খুব গর্বের বিষয়। অর্থাৎ, দু পক্ষ মিলিয়ে তিন মিনিটও বলার সময় পেল না। ক্লাব এবং স্পনসর এতদিন ধরে যা যা বলে আসছিলেন, তার কিছুই বলে উঠতে পারলেন না। কোনও সমস্যার কথাই তুলে ধরতে পারলেন না। বোঝাই যাচ্ছে, কোন থমথমে পরিবেশে আলোচনাটা হয়েছে।
নির্যাস কী দাঁড়াল? আরও একবছর শ্রী সিমেন্ট টাকা দেবে ইস্টবেঙ্গলকে। বিনিময়ে না কোনও চুক্তি সই। না কোনও টার্মশিপ এগ্রিমেন্ট। মানে, স্পনসর বুঝিয়েই দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী টাকা দিতে বলেছেন, দিচ্ছি। ব্যাস। এই কর্তাদের সঙ্গে আর কোনও চুক্তি করার ইচ্ছে নেই। এতে ক্লাবের সম্মান বাড়ল?
স্পনসরের পক্ষ থেকে একবারও বলা হল না, আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে একসঙ্গে পথ চলতে চাই। বারবার বলা হল, আমরা এ বছরের মতো টাকা দিচ্ছি। তার মানে, পরের বছর আবার এই সমস্যা তৈরি হবে। আবার শেষমুহূর্তে সেই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হবে। আবার তিনি পরিত্রাতা হয়ে উঠবেন। আবার ধন্য ধন্য রব উঠবে।
কর্তারা যে কতটা নাবালক, কতটা অযোগ্য, এই ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়ে গেল। তাঁদের স্পনসর আনার মুরোদ নেই। টিকিয়ে রাখার মতো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এমনকী স্পনসরের সঙ্গে ন্যূনতম বাক্যালাপের সম্পর্কটুকুও নেই। কখনও শিখণ্ডি খাড়া করতে হয় প্রাক্তনদের। কখনও ধরতে হয় মিডিয়াকে। আর বারবার বলতে হয়, আমরা মুখ্যমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখছি।
প্রশ্ন হল, প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখতে হবে কেন? পেট খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে হবে, ওষুধ খেতে হবে। এর জন্য তো মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কিছু নেই। এর পরেও এই ক্লাবকর্তারা উৎসব করছেন। হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন। বাতেলা দিচ্ছেন। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর শরণ নিতে হচ্ছে, এটা কতবড় লজ্জার, এই সামান্য বিষয়টা বোঝার বুদ্ধিটুকুও এই কর্তারা হারিয়ে ফেলেছেন।