সুশান্তকে নিয়ে এত চিৎকার থেমে গেল কেন?‌

অর্ণব চৌধুরি

সহজ একটা বিষয়কে কীভাবে অহেতুক জটিল করে তুলতে হয়। কী করে অহেতুক রহস্যের বেড়াজাল টেনে আনতে হয়। কীভাবে ক্রমাগত মিথ্যে বলতে বলতে মিথ্যেটাকে জনমানসে কার্যত সত্যের চেহারা দিতে হয়। এক বছর আগে এটাই দেখিয়েছিল ভারতের মূলস্রোত মিডিয়া। এক বছর পর তাঁদের দিক থেকে কোনও অনুশোচনাও নেই।

sushant10

হ্যাঁ, সুশান্ত সিং রাজপুত। ঠিক এক বছর আগে, এই দিনেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁর মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে সকলেরই মনে হয়েছিল এটা আত্মহত্যা। সেটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। পুলিশ রিপোর্টও তাই বলছিল। এই মাপের একজন সেলিব্রিটি মারা গেলে হইচই হওয়াই স্বাভাবিক। কেন আত্মহত্যা করতে হল, কোন কোন অবসাদের মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন, তদন্তমূলক সাংবাদিকতায় তা উঠে আসতেই পারে।

কিন্তু সেই ঘটনাকে নিয়ে যে পর্যায়ের নোঙরামি চালানো হয়েছে, তা ভারতের মিডিয়া জগতকেই কলুষিত করেছে। দিল্লির শাসকদলের অতি পেটোয়া একটা চ্যানেল দিনের পর দিন গলা ফুলিয়ে চিৎকার করে গেছে। এই ঘটনাকে খুনের চেহারা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সামিল হয়েছিল অন্যন্য ধামাধরা চ্যানেলগুলিও। সামনে ছিল বিহারের ভোট। সুশান্তের মৃত্যুকে সেই ভোটের গরমাগরম ইস্যু করে তোলার মরিয়া চেষ্টা। সুশান্তের বান্ধবীকে ভিলেন বানিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি মিডিয়া। তাঁকে কার্যত খুনির তকমা দেওয়া হয়েছিল। আসরে নেমে পড়েছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত। প্রতিটি ব্যাপারে তাঁকে ঘোলাজলে মাছ ধরতেই হবে। এই ব্যাপারেও তিনি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। ক্রমাগত বলে গিয়েছিলেন, এটা খুন। আর এটাকে হাতিয়ার করে তাঁর যার যার বিরুদ্ধে রাগ ছিল, সেই গায়ের ঝাল মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সত্যিই, বুদ্ধির কত সঙ্কট। কঙ্গনার মতো বিশ্ব বাচালের একেকটা টুইটকে ঘিরে দিনভর চলেছে চাপানোতর।

এক বছর পর তাহলে কী দাঁড়াল?‌ এত চিৎকার, এত নোঙরামি, এত অসভ্যতার পরেও ওটা খুন বলে প্রমাণ করা গেল না। যা যা কার্যকারণ সম্পর্ক উঠে এল, তাতে আত্মহত্যার সম্ভাবনাই বেরিয়ে আসছে। তাহলে এতদিন যারা খুন–‌খুন বলে চেচিয়ে গেল, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?‌ কোর্টই বা নীরব দর্শক কেন?‌ কেন সেইসব চ্যানেলগুলিকে চড়া তিরষ্কার ও ভর্ৎসনা করা হবে না?‌ যাঁরা ক্রমাগত মিথ্যের প্রচার করে গেলেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো মামলা হবে না?‌

ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছিল রিজোয়ানুর রহমানের ক্ষেত্রে। সাদা চোখেই বোঝা যায়, একটি আত্মহত্যা। সেটিকে খুন হিসেবে চালানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গ দিয়েছিল মূলস্রোত মিডিয়া। কার্যত খুনি বানানো হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সিবিআই তদন্তও দেওয়া হল। এত বছর পরেও কোনও কিনারা হল না। সেটা আত্মহত্যা ছিল, এটুকুও কি এত বছরে পরিষ্কার করে বলা যায় না?‌ সিবিআই বা কোর্ট আর কত ঘুমিয়ে থাকবে?‌ তাঁরা ঘুমিয়ে থাকেন বলেন মিথ্যাচারের এত রমরমা।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.