সুবীর দত্ত
পরীক্ষা হবে কি হবে না, এই ব্যাপারে সরকার মতামত চাইছে! বিষয়টা দেখে সত্যিই ভাল লেগেছিল। কিন্তু বিকেল হতে না হতেই মোহভঙ্গ।
সেই গ্যালারি শো। নিজেদের সিদ্ধান্তকে ‘জনমত’ বলে চালিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা। আসলে, পরীক্ষা বাতিলের দায়টা সরকার বোধ হয় নিজের ঘাড়ে নিতে রাজি ছিল না। তাই সেটাকে জনমতের লেবেল এঁটে দেওয়া হল। যেন ভবিষ্যতে কেউ সরকারকে দোষারোপ না করতে পারে। সরকার তখন বলবে, মানুষ চায়নি, তাই হয়নি।
পরীক্ষার ব্যাপারে মানুষের মতামত চাওয়া হল। সকালের কাগজে সেই খবর ছাপা হল। ই মেল অ্যাড্রেস ছাপা হল। কিন্তু বিকেল হতে না হতেই সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়ে গেল। সেই সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে দীর্ঘসময়ের লাইভ প্রেস কনফারেন্স। মতামত জানানোর জন্য আরেক দিন সময় দেওয়া যেত না? এত কীসের তাড়া? দাবি করা হচ্ছে, ৩৪ হাজার চিঠি এসেছিল। বিকেল চারটের মধ্যে সব চিঠি পড়া হয়ে গেল? এটা বিশ্বাস করতে হবে? সরকারের মেশিনারি কি সত্যিই এতটা সচল যে দু ঘণ্টার মধ্যে ৩৪ হাজার চিঠি পড়ে ফেলতে পারে? কজন চিঠি পড়ছিলেন? পুরো চিঠি পড়া হয়েছে? যদি পুরো চিঠি পড়া হয়, তাহলে কখনই এই অল্প সময়ের মধ্যে ৩৪ হাজার চিঠি পড়া সম্ভব নয়।
বলা হল, অনেক স্কুলে নাকি সেফ হোম হয়েছে। সেই অনুপাতটা কত, সরকারের কাছে তথ্য আছে? আসলে, শহরে বসে শিক্ষানীতি তৈরি করতে গেলে যা হয়, এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গ্রাম বা মফস্বলের স্কুল বা শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এঁদের কোনও ধারণাই নেই। মফস্বলের কতগুলো স্কুলে সেফ হোম হয়েছে? একেকটা ব্লকে কতগুলো উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, কতগুলো মাধ্যমিক স্তরের স্কুল বা কতগুলো জুনিয়র হাইস্কুল আছে, সেই সম্পর্কে এঁদের কোনও ধারণাই নেই। তাই মনগড়া একটা সিদ্ধান্ত।
এখনও বিশ্বাস করি, নিজেদের স্কুলে অনায়াসেই পরীক্ষা নেওয়া যেত। যে সব স্কুলে সেফ হোম হয়েছে, তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। এটা আয়োজন করতে তেমন কোনও সমস্যাই হত না। কিন্তু সরকার সেই ব্যবস্থাটুকুও করতে পারল না। সেই সরকার কিনা ২ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার চিঠি পড়ে ফেলল। শতাংশের হিসেব জানিয়ে দিল। এই দুটো ঘটনা একসঙ্গে মেলানো যায়!