টিকার সার্টিফিকেটে ছবি!‌ খুব নিম্নস্তরের অসভ্যতা

সাগর গুপ্ত

ভোটের আগে জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাদের রাজ্যে আমরা বিনামূল্যে টিকা দেব। করোনা আবহে স্বাস্থ্যসাথীর পাশাপাশি এরকম একটি প্রচারে অনেকেই হয়ত ভরসা করেছিলেন। কিন্তু ভোট মিটতেই টিকা নিয়ে কাদা ছোঁছাছুড়ি অব্যহত।

একদিকে কেন্দ্র কার্যত হতা তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্য বলছে, কেন্দ্র কেন টিকা দেওয়ার দায়িত্ব নেবে না?‌ অনেকেই মনে করছেন, কেন্দ্র দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো কথা দিয়েছিলেন, তিনি রাজ্যের তহবিল থেকে টিকার ব্যবস্থা করবেন। তাহলে, এখন কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন কেন?‌

vaccin

শোনা গিয়েছিল, গ্লোবাল টেন্ডার ডেকে প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে টিকা আনা হবে। এখন আর এই ব্যাপারে তেমন উচ্চবাচ্য নেই। উল্টে একটি মারাত্মক কাণ্ড করে বসে আছে রাজ্য প্রশাসন। কোভিড টিকার সার্টিফিকেটে নাকি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি থাকবে। কোভিড টিকায় মোদির ছবি কেন, তা নিয়ে ভোটের আগে সোচ্চার ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কোনও সন্দেহ নেই, যথার্থ প্রতিবাদ। সত্যিই তো, কোভিডের টিকার সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকা কি খুবই জরুরি?‌ সব জায়গায় যে এই নির্লজ্জ প্রচার করতে নেই, এই শিষ্টাচারটুকুও থাকবে না!‌

কিন্তু এবার রাজ্যও একই পথে হাঁটতে চলেছে। শুধু আমলারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কিছুই জানেন না, এমনটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত কখনই হতে পারে না। তিনি হয়ত প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশ দেননি। তাছাড়া, এসব ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়ার দরকারও পড়ে না। কর্তা কী চাইছেন, পারিষদবর্গ ঠিক বুঝে যায়। কর্তা ধরে আনতে বললে সে বেঁধে আনে। এটাই হয়েছে। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ছবি ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা জানেন ছবির প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দুর্বলতা কতখানি।

তিনি ছবি প্রিয় হতেই পারেন। সরকারি বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং তাঁর ঢাউস ছবি ছাড়া কার্যত অসম্পূর্ণ। কিন্তু এক্ষেত্রে ছবি দেওয়াটা একইরকম নির্লজ্জ ব্যাপার, এই সহজ সত্যিটা তাঁকে কে বোঝাবে?‌ তালে তাল দিয়ে যাওয়া হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ–‌রাই তাঁর চারপাশে। সুপরামর্শ কে দেবেন?‌ সত্যিই মুখ্যমন্ত্রী কতখানি নির্বান্ধব!‌ ছবি ছাপতে ছাপতে অভ্যেসটা এমন জায়গায় চলে গেছে, কোথায় থামতে হয়, সেটাও ভুলে গেছেন। এটা শুধু কুরুচিকর বললে কম বলা হয়। এটাকে প্রশাসনিক অসভ্যতাই বলা যায়। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?‌

(‌এটি ওপেন ফোরামের লেখা। বেঙ্গল টাইমসে ওপেন ফোরাম হল পাঠকের মুক্তমঞ্চ। এখানে পাঠকের মতামতকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। )‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.