হেমন্ত রায়
যে ভুলটা শুভেন্দুর ক্ষেত্রে হয়েছিল, রাজীব ব্যানার্জির ক্ষেত্রেও সেই একই ভুল করে চলেছে মূলস্রোত মিডিয়া। জোর প্রচার, রাজীবের সঙ্গে দলের ভুল বোঝাবুঝি নাকি মিটে গেছে। দল নাকি তাঁকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে।
শুভেন্দুর ক্ষেত্রেও এমনটাই বলা হয়েছিল। ভাইপোর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও নাকি সফল হয়েছিল। তিনি নাকি দলেই থাকছেন। তাঁর সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝি নাকি মিটে গেছে। সেই বৈঠকের নির্যাস কী, একদিন পরেই বোঝা গিয়েছিল।
রাজীবের ক্ষেত্রেও বৈঠকের নির্যাস কী, কয়েক দিনের মধ্যেই জানা যাবে। যতদূর মনে হয়, তাঁর সঙ্গেও ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগবে না। তাঁকেও সম্ভবত পদ্ম শিবিরেই দেখা যাবে।
রাজীবের নামে হঠাৎ পোস্টার পড়তে শুরু করেছে, ব্যাপারটা আদৌ তেমন নয়। যাঁরা জেলায় ঘোরেন, তাঁরা জানেন, প্রায় এক বছর আগে থেকেই রাজীবের নামে নানা জেলায় পোস্টার পড়া শুরু হয়ে গেছে। কোথাও রাজীব ব্যানার্জি ফ্যান ক্লাব নাম দিয়ে। পুজো বা দীপাবলির পরেও বিভিন্ন জেলায় রাজীবের নামে শুভেচ্ছা জানানোর হোর্ডিং পড়েছে। রাজীবের নামে হাওড়ায় হোর্ডিং থাকতেই পারে। কিন্তু যখন বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া বা নদিয়ায় হোর্ডিং পড়ে, তখন বুঝতে হবে, অনেক আগে থেকেই এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এবং রাজীব বিষয়টা জানেন না, এমনও নয়।
রাজীব নিজেকে উপেক্ষিত বা বঞ্চিত ভাবতেই পারেন। তাঁর মনে হতেই পারে, যোগ্যতা অনুযাযী তিনি গুরুত্ব পাননি। সেই ক্ষোভ বা অভিমান অনেকটাই সঙ্গত। তাহলে কি রাজীব চাপ দিয়ে গুরুত্ব আদায় করতে চাইছেন? এখন তাঁকে যতই গুরুত্ব দেওয়া হোক, তিনি দল ছাড়ার ব্যাপারে অনেক দূরে এগিয়ে গেছেন। কোনও প্রলোভনেই আর কাজ হবে না।
কেন দল ছাড়তে চাইছেন? ক্ষোভ–বিক্ষোভ তো আছেই। কিন্তু তার থেকেও বড় কারণ অন্য। দেওয়াল লিখনটা তিনি পড়তে পারছেন। সরকার বদলের সম্ভাবনা না থাকলে কখনই দল বদলের কথা ভাবতেন না। ক্ষোভ–অপমান সহ্য করেই থেকে যেতেন। মোদ্দা কথা, বিরোধী বিধায়ক হয়ে থাকতে চান না। যদি প্রবল বিজেপি–র হাওয়া ওঠে, তখন হয়ত তাঁরও জেতা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনকী আগের ভোটে লক্ষাধিক ভোটে জিতলেও এবার জেতার গ্যারান্টি দেওয়া মুশকিল। তুলনায়, বিজেপির হয়ে জেতা হয়ত অনেকটাই সহজ। আর জিতলে ক্যাবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই পাবেন।
তাই, যেভাবেই হোক, রাজীবকে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে হবে, দল ছাড়তে হবে। কোনও রফাসূত্রই এখন আর কাজ করবে না।