পারিবারিক কেচ্ছা সামাল দিতে বিধানসভায় আইন বদলাতে হল!

১২২ জন কাউন্সিলর। তাও মেয়র হওয়ার লোক পাওয়া গেল না। নতুন আইন আনতে হল। এই আইন একদিন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। অধিকাংশ পুরসভাতেই কাউন্সিলরদের বাদ দিয়ে বাইরে থেকে মেয়র বা চেয়ারম্যান বাছার প্রবণতা শুরু হবে। এই মহামারি সামাল দেওয়া যাবে তো? কত বড় সাংবিধানিক সংকট তৈরি হল, বুঝতে পারছেন? লিখেছেন সরল বিশ্বাস।

গত দুদিন ধরে একটাই চর্চা— শোভন–রত্না–‌বৈশাখী। যেন রাজ্যে আর কোনও সমস্যা নেই। আর এই ত্রিকোণ প্রেম চাপা দিতে কত হাস্যকর কাণ্ডই না ঘটে চলেছে। মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হল শোভন চ্যাটার্জিকে। ছাড়তে হচ্ছে মেয়র পদও।
পুরসভায় তৃণমূলের ১২২ জন কাউন্সিলর। তার পরেও সেখান থেকে কাউকে মেয়র পাওয়া যাচ্ছে না। ভাড়া করে আনতে হচ্ছে বিধানসভা থেকে। বাইরের লোক যেন মেয়র হতে পারেন, সেই জন্য বিধানসভায় বিল এনে নতুন আইন তৈরি করতে হচ্ছে। একটা সমস্যাকে চাপা দিতে গিয়ে আরও অনেক সমস্যাকে ডেকে আনা হল। এই আইনের কুফল কী কী হতে পারে, তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। বোঝাই যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সুপরামর্শ দেওয়ার লোকের সত্যিই অভাব।
এই নতুন আইন থেকে কী কী বার্তা উঠে আসছে। কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে, একবার দেখে নেওয়া যাক।

১)‌ বোঝা গেল, ১২২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে কেউ মেয়র হওয়ার উপযুক্ত নন। তাই বাইরে থেকে অন্য একজনতে আনতে হচ্ছে। তৃণমূল কাউন্সিলরদের পক্ষে এটা খুব ভাল বিজ্ঞাপন?‌
২)‌ ডেপুটি মেয়র ছিলেন ইকবাল আমেদ। তাঁকে সরতে হচ্ছে। কারণ, মেয়র পদে আনা হচ্ছে ফিরহাদ হাকিমকে। এতদিন মেয়র ছিলেন হিন্দু, ডেপুটি মেয়র মুসলিম। এবার মেয়র হলেন মুসলিম, অতএব ডেপুটি মেয়র করতে হবে হিন্দুকে। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়টাই প্রাধান্য পেয়েছে। খুব ভাল নজির হল?‌

bidhan sabha
৩)‌ পুরমন্ত্রী এবং মেয়র একই ব্যক্তি। অর্থাৎ, যিনি আবেদন জানাবেন, তিনিই মঞ্জুর করবেন। মেয়র হিসেবে ফাইল নিয়ে যাবেন। আর পুরমন্ত্রী হিসেবে নিজেই অনুমোদন দেবেন। দারুণ এক সাংবিধানিক সার্কাস হতে চলেছে।
৪)‌ আইন যখন হচ্ছে, তখন তা নিশ্চয় কলকাতা পুরসভার জন্য হবে না। অন্যান্য পুরসভাতেও কার্যকর হবে। কোচবিহার বা পুরুলিয়াতেও বাইরের যাকে তাকে চেয়ারম্যান করা যাবে। এর ফলে কী কী সাংবিধানিক ও সাংগঠনিক সমস্যা তৈরি হবে, ভেবে দেখেছেন? দলের জেলা সভাপতির হয়ত ইচ্ছে হল, তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান হবেন বা নিজের বউকে করবেন। এত লোকের এতরকম উচ্চাকাঙ্খা তৈরি হবে, সামলাতে পারবেন? কতবার উপনির্বাচন হবে?
৫) পুরসভা নির্বাচনে যাঁরা জিতবেন, তাঁদের মধ্যেই চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে মারামারি সামলানো যাচ্ছে না। এই লড়াইয়ে যদি বাইরের লোকেরাও ঢুকে পড়েন, তাহলে কী মারাত্মক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, ভেবে দেখেছেন? বোর্ড ক্ষমতায় এসেছে দেখে কার কখন চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছে হবে, কে বলতে পারে? অর্থাৎ, কাউন্সিলরদের মধ্যেও একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হল। তখন হয়ত দেখা যাবে, জেতা লোকেদের বদলে বাইরে থেকে কাউকে চেয়ারম্যান করাটাই প্রবণতা হয়ে দাঁড়াবে। ইচ্ছে থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

যাঁরা নতুন আইনের পরামর্শ দিলেন, তাঁরাও বুঝতেও পারছেন না রাজ্যে কী কী সাংবিধানিক সংকট তৈরি করলেন। মুখ্যমন্ত্রীও বুঝছেন না। এটাই সমস্যা। যাঁরা আইনের মর্ম বোঝেন না, আইন মেনে চলার কোনও দায় যাঁদের নেই, তাঁদের হাতেই রয়েছে আইন তৈরির অধিকার। বলা ভাল, সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে তাঁরা যা খুশি খামখেয়ালিপনা করে যেতে পারেন।

সত্যিই, অনুপ্রেরণা বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.