একটু ভাড়া বাড়িয়েই সমাধান করা যেত

সুমিত চক্রবর্তী

যেটা সহজে করা যায়, সেটা অহেতুক জটিল করাই রাজ্য সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১)‌ প্রশাসন যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। ২)‌ যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁদের অভিজ্ঞতা নেওয়াও হয় না। ৩)‌ ভয়ের বাতাবরণ, ফলে কেউ সিদ্ধান্ত নিতেও পারেন না। আর এর ফল ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে।

পরিবহণের কথাই ধরা যাক। দীর্ঘদিন লকডাউনের পর বাস চালাতেই হত। কিন্তু বাস চালানো নিয়ে অহেতুক জটিলতা তৈরি হল। প্রথমে অদ্ভুত একটা ভাড়ার তালিকা হল। সরকার কার্যত মেনেও নিল। পরে হঠাৎ করে বলা হল, এই ভাড়া বৃদ্ধি মানা যাবে না। ওই ভাড়াতেই বাস চালাতে হবে। আবার বলা হল, যতগুলো সিট, তার বেশি প্যাসেঞ্জার নেওয়া যাবে না। আসলে, লকডাউন চলার সময় এই নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না।

bus3

ভরতুকি দিয়ে বাস মালিকরা যে বাস চালাবেন না, এটা শুরুতেই বোঝা উচিত ছিল। ফলে, নামমাত্র বাস রাস্তায় নামল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস নেই। যদিও বা একটা এল, তাতে ওঠার জন্য যে হুড়োহুড়ি, এতদিনের লকডাউন একলহমায় চুলোয় গেল।

এখন ঘোষণা হল, বেসরকারি বাসপিছু মাসে পনেরো হাজার টাকা দেওয়া হবে। সাময়িকভাবে বাস মালিকরা হয়ত কিছুটা রিলিফ পেলেন। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং, একে ঘিরে নতুন কোনও দুর্নীতির দরজা হয়ত খুলে গেল। আমফানে যেমন যার ঘর ভাঙেনি, তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, এখানেও তেমনটা হবে। যারা হয়ত বাস নামালেনই না, তাদের অ্যাকাউন্টেই টাকা ঢুকে যাবে। এদিকে, যাঁরা বাস চালাবেন, তাঁদের নামটাই হয়ত উঠবে না। কারণ, এটা তদারকি করতে গেলে সে সদিচ্ছা ও তৎপরতা লাগে, তার কোনওটাই নেই। মাসে পনেরো হাজার মানে, দিনে পাঁচশো। দিনে পাঁচশো ভর্তুকিতে মালিক বাস নামাতে রাজি হবেন?‌ সম্ভাবনা খুবই কম।

ন্যূনতম ভাড়া বাড়াতে আপত্তি কীসের?‌ সাত টাকার জায়গায় দশ টাকা করা যেতেই পারত। প্রতি স্ল্যাবে তিন টাকা বাড়ালে যাত্রীদের খুব একটা আপত্তি থাকত বলে মনে হয় না। একঘণ্টা অপেক্ষা করার থেকে, ভিড় বাসে গাদাগাদি করে যাওয়ার থেকে তিন টাকা বেশি দিয়ে যেতে যাত্রীরা স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে যেতেন। বাস মালিকদের বলা যেতে পারত, এই বর্ধিত ভাড়া আপাতত তিন মাসের জন্য। পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কিন্তু সরকার ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা করবে না। দেখো, আমরা ভাড়া বাড়াচ্ছি না এটা বলেও কৃতিত্ব নিতে হবে। এদিকে, পরিবহণমন্ত্রী বা সচিব নামেই বৈঠক করছেন। এইসব বৈঠকের কী মূল্য আছে!‌ সেই তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

বাস মালিকরাও তেমনি। যখন সরকারি বৈঠক, তখন নিজেদের দাবির কথা জোরের সঙ্গে বলতে পারছেন না। তখন সব ঘাড় নেড়ে শুনে নিচ্ছেন। পরে বলছেন, এই ভাড়ায় চালানো যাবে না। সেটা সরকারি বৈঠকে জোরের সঙ্গে বলতে পারেন না কেন?‌ নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে পারেন না কেন?‌ ফলে, প্রতিটি মিটিং থেকে কার্যত অশ্বডিম্ব প্রসব হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.