প্রসূন মিত্র
একটা কথা অকপটেই স্বীকার করে নেওয়া ভাল। আমি ব্যোমকেশ বক্সীর কোনও গল্পই পড়িনি। ফেলুদা পড়েছি, কাকাবাবু পড়েছি, পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়েছি। আরও কিছু গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি। এমনকী সার্লোকহোমসও পড়েছি। কিন্তু কখনই ব্যোমকেশ পড়িনি। দু একবার চেষ্টা করেছিলাম। যে কোনও কারণেই হোক, মাঝখানে রণে ভঙ্গ দিয়েছিলাম।
তাই বলে ভাববেন না, আমি ব্যোমকেশ সম্পর্কে কিছুই জানি না। যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সমানে তর্ক করতে পারি।
এটা কীভাবে সম্ভব? কারণ, আমি টিভিতে ব্যোমকেশ দেখেছি। হাল আমলে যে সব সিনেমা বা সিরিয়াল হল, সেগুলো নয়। আমি দেখেছি সেই নয়ের দশকে রজিত কাপুরের ব্যোমকেশ। তখন বয়স অল্প। তখনও কেবল টিভি হানা দেয়নি। ভরসা ছিল সবেধন নীলমণি দূরদর্শন। একটি এপিসোডও মিস করিনি। মনে আছে, একবার লোডশেডিং হয়েছিল বলে পাশের বাড়িতেও ছুটে গিয়েছিলাম। তাদের ব্যাটারি ছিল। হ্যাঁ, কিশোর বয়সে এতটাই আকর্ষণ ছিল সেই ছোট পর্দার ব্যোমকেশকে ঘিরে।
তখন পরিচালকদের নাম সেভাবে জানতাম না। জানার ইচ্ছেও ছিল না। সিনেমা বা সিরিয়াল তখন পরিচিত ছিল অভিনেতাদের নামে। সেই কারণেই ব্যোমকেশ মানেই রজিত কাপুর। পরে জানলাম, এর পরিচালক ছিলেন একজন বাঙালি, বাসু চ্যাটার্জি।
তাই, বাসু চ্যাটার্জির হাত ধরেই আমার ব্যোমকেশ চেনা। সেই টানেই দেখেছিলাম সত্যজিৎ রায় পরিচালিত উত্তম কুমারের চিড়িয়াখানা। গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি মূলত কিশোর বয়সেই। পরেরদিকে সেভাবে পড়া হয়নি। ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে মনে হয়েছিল, সব তো দেখা হয়েই গেছে, তাহলে আর পড়ে কী করব? আগে থেকেই তো গল্পগুলো জানি। ফলে, আমার কাছে তো কোনও সাসপেন্স থাকবে না।
পরে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত সিনেমাগুলো দেখেছি। অরিন্দম শীলের ছবিও দেখেছি। এমনকী ঋতুপর্ণ শেষ ছবিটা করেছিলেন ব্যোমকেশকে নিয়ে। সেটাও দেখেছি। কিন্তু ব্যোমকেশ বলতেই সবার আগে মনে পড়ে সেই নয়ের দশকে দূরদর্শনে দেখা সিরিয়াল। তাই বাসু চ্যাটার্জির মৃত্যু সংবাদ যেন সেই পুরনো ব্যোমকেশকে আবার মনে করিয়ে দিল। যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা তাঁদের মতো করে স্মৃতিচারণ করবেন। আমাদের সে সুযোগ হয়নি। কিন্তু কী করে ভুলে যাব সোমবারের রাতগুলো? রাত নটা বাজলেই টিভির সামনে বসে পড়ার গল্প! আমাদের ছেলেবেলার অনেকটা জুড়েই যে থেকে গেছে ব্যোমকেশ, যার আড়ালে ছিলেন এই মানুষটা।