সিকিম সেন
বেশ কয়েকদিন আগেই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে। যে কোনও কারণেই হোক, আগে দেখার সুযোগ হয়নি। হঠাৎ করেই চোখে পড়ে গেল। প্রায় দেড় ঘণ্টার ভিডিও। পুরোটাই রনি রায়কে নিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে বানানো হয়েছে।
মিডিয়া জগৎ অনেকটা প্রদীপের মতোই। বাইরে থেকে অনেক আলো। কিন্তু তলাতেই জমে থাকে অন্ধকার। সাংবাদিকরা এত লক্ষ লক্ষ শব্দ লেখেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরা যখন পৃথিবী থেকে চলে যান, এক দু লাইনের খবর বেরোয়। চিত্র সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও কথাটা একইরকম প্রযোজ্য। তাঁরা হাজার হাজার ছবি তোলেন। সেই ছবি কাগজে রোজ ছাপাও হয়। কিন্তু তাঁদের ছবি আড়ালেই থেকে যায়।
রনি রায় এমন একজন মানুষ, যাকে একডাকে গোটা ময়দান চিনত। শুধু ময়দান বলি কেন, সিনেমার জগৎ, রাজনীতির জগৎ, সব জগতেই বিস্তর পরিচিত নাম। তিনি যে এত বড় সেলিব্রিটি, সেটা সত্যিই অনেকের জানা ছিল না। বলা যায়, তাঁর মৃত্যু যেন চোখ খুলে দিয়ে গেল। টানা কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়া আচ্ছন্ন থেকেছে রনি রায়কে নিয়ে। কত মানুষের কত রকমের স্মৃতিচারণ। তিনি যে নীরবে এত মানুষের উপকার করে গেছেন, তা হয়ত অনেকের অজানাই থেকে গিয়েছিল।
সেই রনি রায়ের স্মরণে চমৎকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে এক্সট্রা টাইম। গ্রে মাইন্ড কমিউনিকেশনের এই দেড় ঘণ্টার ভিডিওতে পাওয়া গেল অন্য এক রনি রায়কে। একের পর এক দুষ্প্রাপ্য ছবি। সঙ্গে নানা জগতের মানুষের স্মৃতিচারণ। লকডাউনে সবাই প্রায় ঘরবন্দি। অনেকেই ঘর থেকেই শুটিং করে পাঠিয়েছেন। সেই তালিকায় কে নেই! বাইচুং থেকে দীপেন্দু, ট্রেভর মর্গান থেকে করিম বেঞ্জারিফা, শিল্টন থেকে অভ্র, নীতু সরকার থেকে সৃঞ্জয় বোস। আর তামাম সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারকূল তো আছেনই। এত অল্প সময়ে এত সুন্দর একটি প্রোডাকশন। পরতে পরতে যত্ন ও নিষ্ঠার ছাপ। কারও প্রতিক্রিয়াই মেকি মনে হল না। সবাই যেন ভেতর থেকেই কথাগুলো বলছেন। এই অকৃত্রিম ভালবাসা শুধু রনি রায়ের জন্যই বরাদ্দ। ময়দানে আর কেউ এতখানি ভালবাসা পেতেন বলে মনে হয় না।
মিডিয়া জগতে সেলিব্রিটি রিপোর্টারের অভাব নেই। তাঁদের পরিচিতি, প্রভাব ঈর্ষা করার মতো। কিন্তু তাঁরা কেউ রনি রায়ের মতো এত মানুষের নির্ভেজাল ভালবাসা পাননি। রনি রায় সত্যিই সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন। ছাপিয়ে গেল এক্সট্রা টাইমও। আসলে, রনি রায় এমন একটা নাম যাকে কোনও প্রতিষ্ঠানের গণ্ডিতে মাপতে যাওয়াটাই ভুল। প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর পরিচিতি নয়, বরং তাঁর জন্যই প্রতিষ্ঠান আলোকিত হয়। যে প্রতিষ্ঠানে তিন দশক কাজ করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা জানাবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে যেন বড্ড কার্পণ্য ছিল। সে তুলনায় হৃদয় উজাড় করে দিয়েছে এক্সট্রা টাইম। পর্দার আড়ালে থাকা একজন মানুষকে যথার্থ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরা যেন সর্বশক্তি উজাড় করে দিল।
মনে হতেই পারে, এত লোকের সঙ্গে যখন কথা হল, সেই তালিকায় আরও কয়েকটা নাম থাকতেই পারত। থাকলে ভাল হত। কিন্তু এত স্বল্প সময়ে সবার প্রতিক্রিয়া জোগাড় করা কঠিন, এই বাস্তবতাটাও মাথায় রাখা দরকার। যেটা হয়েছে, সেটাই বা মন্দ কী! আবার বলছি, হৃদয়ের প্রসারতা না থাকলে এমন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। তাঁকে যে এত মানুষ ভালবাসেন, সেটা শুধু রনি রায়ই দেখে যেতে পারলেন না।
***
(মিডিয়া সমাচার। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ। এখানে মিডিয়া জগতের নানা ঘটনা ও বিশ্লেষণ উঠে আসে। বলা যায়, মিডিয়া জগৎ নিয়ে ওপেন ফোরাম। চাইলে, আপনারাও অংশ নিতে পারেন। )
এক্সট্রা টাইমের ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া হল। যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা চাইলে দেখে নিতে পারেন। নিচেক লিঙ্কে ক্লিক করুন।