অগ্নিশ্বর শেষ করেই বাঘবন্দী খেলা!‌

অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল উত্তম কুমারের শুটিং দেখার। অবশেষে সুযোগ এসে গেল। তখন শুটিং চলছে অগ্নীশ্বর ছবির। সেই শুটিং শেষ করেই বাঘবন্দী খেলা। একইদিনে এমন বিপরীতধর্মী দুটো চরিত্র!‌ শুটিং দেখার সেই অভিজ্ঞতা মেলে ধরলেন বিশ্বরঞ্জন দত্ত গুপ্ত।

অনেক বছর আগের কথা। আমি তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। সিনেমা সম্পর্কে এত খুঁটিনাটি না বুঝলেও উত্তমকুমারের অভিনয়ের খুবই ভক্ত ছিলাম। উত্তমকুমার অভিনীত কোনও সিনেমা রিলিজ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে opening day এর opening show দেখতাম। মনে আছে, অনেক কসরত করে বাড়ি থেকে পয়সা জোগাড় করে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রচন্ড ধাক্কাধাক্কির মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটে উত্তমকুমারের সিনেমা দেখতাম। উত্তমকুমার অভিনীত যে সিনেমাই দেখতাম মনে হত সিনেমার চরিত্রটি একেবারে জীবন্ত হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে যেন কথা বলছে। এতটাই সাবলীল লাগত উত্তমকুমারের অভিনয়।

agniswar

মনে মনে খুব ইচ্ছে হত উত্তমকুমারকে সামনা সামনি কাছ থেকে দেখবার। আমাদের পাড়ার এক দাদার স্টুডিও পাড়ায় কাজের সূত্রে যাতায়াত ছিল। তাঁকে প্রায় রোজই খুব করে অনুরোধ করতাম একবার উত্তমকুমারের শুটিং দেখাবার জন্য। অবশেষে পাড়ার দাদাটির দৌলতে উত্তমকুমারকে একেবারে কাছে থেকে তাঁর শুটিং দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল। মনে আছে দুটো বাস change করে এক স্টুডিওতে তাঁর শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। বড় রাস্তার উপর স্টুডিওতে ঢুকবার বিশাল এক লোহার গেট। গেটটা পার হয়ে ডান দিকে সবুজ ঘাসের ছোট একটা লন। বাদিকে কিছু গাড়ি parking করা রয়েছে। আমার সঙ্গের দাদাটি বলল – তোর ভাগ্য ভাল, উত্তমকুমারের গাড়ি parking এ রয়েছে। তার মানে ” দাদা ” স্টুডিওতে এসে গেছেন।

একটা ” ঘরের ভিতরের ” সেট তৈরি করা হয়েছে। সেটের ভিতর বেশ কয়েকজন লোক তাঁদের নিজেদের কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত। জানতে পারলাম এই ” সেটে ” একটু পরেই স্বনামধন্য পরিচালক অরবিন্দ মুখার্জির পরিচালনায় ” অগ্নীশ্বর ” ছবির শুটিং হবে। একটু পরে ” সেটে ” দেখলাম অভিনেত্রী সুমিত্রা মুখার্জি আর অন্যান্য অভিনেতাদের। পরিচালক তাঁদের দৃশ্যটা সম্পর্কে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। সব কিছু finaly দেখে নিয়ে পরিচালক একজনকে আস্তে করে কিছু একটা নির্দেশ দিলেন । দু-এক মিনিট পরে দেখলাম সবাই যেন তঠস্থ হয়ে উঠলেন। সুমিত্রা মুখার্জি সহ অন্যান্য অভিনেতারা পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী ” পজিশন ” নিলেন। ” সেটের ” ভিতর কোলাহলটা নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেল। ” সেটে ” ঢুকলেন ” ডাঃ অগ্নীশ্বর মুখার্জির ” বেশে মহানায়ক উত্তমকুমার । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাঁকেই দেখে যাচ্ছি। উত্তমকুমারের রূপের আর ব্যক্তিত্বের ছটায় ” সেট ” যেন আলোকিত হয়ে রয়েছিল। খুব আস্তে অরবিন্দ মুখার্জির সঙ্গে সামান্য আলোচনা করে উনি শুটিং শুরু করলেন। উপস্থিত সবাইকে বাকরুদ্ধ করে তাঁর অভিনয় শেষ হবার পর উনি ” সেট ” থেকে বেরিয়ে গেলেন।

bagh bandi

ফিরে আসবার সময় দেখলাম – বাইরে সবুজ ঘাসের লনে অনেক লোক বেষ্টিত হয়ে উনি দাঁড়িয়ে কথা বলছেন । হঠাৎ স্টুডিওর একজন লোক, যতদুর সম্ভব আমার মনে পড়ছে , উত্তমকুমারকে বললেন – – ” দাদা , এরপরে আপনার ” বাঘ বন্দী খেলা”র শুটিং রয়েছে । আমরা কি আয়োজন শুরু করব? ” উনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলেন। ” অগ্নীশ্বর ” আর ” বাঘবন্দী খেলা ” ছবি দুটি উত্তমকুমারের অভিনয় গুনে কী অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, সেটা সকলেরই জানা। ” ডাঃ অগ্নিশ্বর মুখার্জির ” মতো চরিত্রে অভিনয় করার কিছুক্ষণ পরেই অভিনয় করলেন ” বাঘবন্দী খেলায় ” – ” ভবেশ বাড়ুজ্যের ” মতো সম্পূর্ণ বিপরীত এক জটিল চরিত্রে। কী করে সম্ভব? পরে বুঝেছি – হ্যাঁ, এটাই সম্ভব, সেইজন্যই তিনি আমাদের কাছে ” মহানায়ক “, তিনি আমাদের সকলের প্রিয় ” উত্তমকুমার ” ।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.