বিরাট ভদ্র
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে দেখে শিখুন। টিভির পর্দায় যাঁরা রোজ বিতর্ক করতে বসেন, তাঁরা শিখতে পারেন। তৃণমূল,বিজেপি, বাম, কংগ্রেস সব দলের টিভি নেতারাই শিখুন। শিখুন কীভাবে টিভির পর্দায় ভদ্রতা বজায় রাখতে হয়।
ঘণ্টাখানের সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে মুখোমুখি বিতর্কে বসেছিলেন অধ্যাপক সুগত বসু, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই বিতর্কের মুখ্য আকর্ষণ কে ছিলেন? জ্ঞানের কথা ধরলে মূল আকর্ষণ সুগত বসু। নেতাজির বংশধর, প্রথিতযশা ঐতিহাসিক। তাঁর কথার গুরুত্বই আলাদা। সৃজিতও কম যান না। গুমনামী সিনেমাটা তিনিই বানিয়েছেন। তিনিই পালের গোদা।
কিন্তু মূল আকর্ষণ অবশ্যই ছিলেন প্রসেনজিৎ। তিনি গবেষকও নন, পরিচালকও নন। গুমনামী বিতর্কে তাঁর কোনও ভূমিকা থাকার কথা নয়। কিন্তু এই তিনজনের মধ্যে তিনিই সবথেকে জনপ্রিয়। এবং তিনি জোর গলায় কোনও বক্তব্য রাখলে, সেটা অবশ্যই বাকি দুজনের বক্তব্যকে ছাপিয়ে যেত। তিনি যদি একবার বলতেন, আমি মনে করি, গুমনামী বাবাই নেতাজি, তাহলে সুগতবাবুর হাজার যুক্তির চেয়েও তাঁর কথাই অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হত। আবার তিনি যদি বলতেন, আমি পেশাদার অভিনেতামাত্র, সৃজিত যেমন বলেছে, আমি তেমন করেছি, আমি মনে করি না গুমনামী বাবা নেতাজি। তাহলে, সৃজিতের সিনেমার ওখানেই বারোটা বেজে যেত।
কিন্তু প্রসেনজিৎ জানেন যে, এই বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। তাই গোটা অনুষ্ঠান তিনি কার্যত মৌন হয়ে থাকলেন। আজকের বঙ্গজীবনে সিরিয়ালের অভিনেতাও বুদ্ধিজীবী। প্রতিটি ব্যক্তি প্রতিটি বিষয়ে অঝোরে জ্ঞান দিয়ে যান। সেখানে প্রসেনজিতের এই মৌনতা শিক্ষনীয়। না জেনে কথা বলা, অন্যের কথার মাঝখানে কথা বলা যে অশিক্ষার লক্ষণ, এই শিক্ষা সবার থাকে না। টিভির আলোচনাসভাগুলোতে অধ্যাপক, শিক্ষকরা প্রতিমুহূর্তেই এই অশিক্ষার পরিচয় দেন। সেদিনের অনু্্ষ্ঠানে সৃজিত মুখোপাধ্যায় অনন্ত সজ্জায় বিষ্ণুর মতো কাত হয়ে পড়ে সুগত বসুর মুখোমুখি এঁড়ে তর্ক করে গেছেন। এমনকী, সুগতবাবুকেও কখনও কখনও উত্তেজিত হয়ে সৃজিতের কথা মাঝখানে থামিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু প্রসেনজিৎকে সাবাস। একবারও নিজের লিমিট ক্রস করেননি। আমি কোনটা জানি আর কোনটা জানি না, সেটা জানাই সবথেকে বড় জানা। প্রসেনজিতের সেই জ্ঞান আছে। টিভিতে যাঁরা সন্ধে হলেই বিতর্কের তুফান তোলেন, তাঁদের আছে!