ছেলে–মেয়েকে সাঁতারটা অন্তত শেখান

ধীমান সাহা

কাগজে প্রায়ই সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার খবর পড়ি।  কখনও দীঘা, কখনও পুরী, কখনও মন্দারমণি। জায়গাগুলো বদলে যায়। কিন্তু মর্মান্তিক ঘটনাগুলো থামতে চায় না। কেন এমনটা হয়?
অনেকক্ষেত্রেই শোনা যায়, মদ্যপান করে অনেকে জলে নামেন। তখন কতদূর পর্যন্ত নামা উচিত, কোথা থেকে ফিরে আসা উচিত, এই বোধটা হারিয়ে যায়। সাহস একটু বেশিই বেড়ে যায়। মনে হয়, এই সামান্য ঢেউ আমার কী করবে? এটা একটা অন্যতম কারণ।
আরও একটা বড় কারণ হল সাঁতার না জানা। যারা তলিয়ে যায়, তাদের অনেকেই সাঁতার জানে না। তার মানে, যারা সাঁতার জানে না, তারা কি সমুদ্রে স্নান করবে না? নিশ্চয় করবে। কিন্তু তাদের একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে। যেন হঠাৎ করে কোনও ঢেউ এসে ভাসিয়ে দিতে না পারে।

digha2
সমুদ্রে যতজন তলিয়ে যায়, একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন, তাদের অধিকাংশই সাঁতার জানে না। সাঁতার জানলেই সে বেঁচে যাবে, এমন নয়। অনেক সময় সাঁতার জানার পরেও কিছু করার থাকে না। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সাঁতার জানলে অন্তত অর্ধেক মৃত্যু এড়ানো যায়। সে অন্তত বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করবে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারবে। পায়ের তলায় মাটি খুঁজে না পেলেও নিজের চেষ্টায় ফিরে আসার চেষ্টা করবে। এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে না।

আমাদের বেড়ে ওঠা সাতের দশকে। তখন অধিকাংশ ছেলে–মেয়েই সাঁতার জানত। এমনকী আটের দশক বা নয়ের দশকেও দশজনের মধ্যে অন্তত সাত–আটজন সাঁতার জানত। গত পনেরো–কুড়ি বছরে ছবিটা যেন একেবারেই বদলে গেছে। স্নান করতে এখন পুকুরে যাওয়ার রেওয়াজটাই কমে গেছে। এখন একশো জন কিশোর বা তরুণের মধ্যে পাঁচজন সাঁতার জানে কিনা সন্দেহ। মাত্র পনেরো–কুড়ি বছরে ছবিটা এতটা বদলে গেল?

mandarmoni

শহরের ছেলেরা তবু সুইমিং পুলে গিয়ে শরীর চর্চার তাগিদে (বা, মায়ের জেদাজেদিতে) কিছুটা হলেও শিখছে, সবচেয়ে করুণ অবস্থা গ্রাম বা আধা শহরগুলোতে। এখানে তো সুইমিং পুল নেই। পুকুরে স্নান করতে যাওয়াও কমে গেছে। ফলে, পুকুর সংস্কারও হয় না। নোঙরা বাড়লে আরও বেশি অনীহা তৈরি হয়।

শুধু সমুদ্র স্নানের সময় নয়। আরও নানা কাজে লাগে এই সাঁতার। মেদ ঝরানো থেকে শুরু করে নিজেকে ফিট রাখায় সাঁতার খুবই কার্যকরী। সারা শরীরে ব্যায়াম হয়ে যায় আধঘণ্টার সাঁতারে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সাঁতারের ভূমিকা রয়েছে। যখন নৌকোয় বা লঞ্চে করে নদী পারাবার করে, অনেকের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভীতি কাজ করে। যদি লঞ্চ ডুবে যায়! এত রোমাঞ্চকর জলপথ ভ্রমণের আনন্দই তারা নিতে পারে না। সবসময় যেন একটা ভয় কাজ করে। আবার যারা সাঁতার জানে, তাদের চোখে মুখে সেই ভয়ের রেশ খুঁজে পাই না।

আমার মনে হয়, অভিভাবকদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। দয়া করে ছেলেকে সাঁতারটা শেখান।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.