মাইলের পর মাইল হেঁটে যান চা বাগানের মাঝ দিয়ে। এই গরমে একটু হিমেল হাওয়া, একটু ভেসে বেড়ানো মেঘ। ভিনদেশ বা ভিনরাজ্য নয়, একেবারেই মিরিকের লাগোয়া ছোট্ট গ্রাম তাবাকোশি। সন্ধান দিলেন ভুবন সোম।।
বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি! পৃথিবী ছেড়ে দিন। এই বাংলার কতটুকু জানি! আবার সেই রবি ঠাকুর। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া।
ভূমিকা এখানেই থামানো যাক। সোজা বলা যাক, এবার তাবাকোশি ঘুরে এলাম। নামটা প্রথম শুনছেন, তাই তো? আমিও আগে শুনিনি। এক বন্ধু গত বছর গিয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি পাঠিয়েছিল। ছবিগুলো ভাল লেগে গেল। মনে হল, যদি ঘুরে আসা যায়, কেমন হয়!
কিন্তু আমি ভাবলেই তো হল না। সংসার হল মমতার ক্যাবিনেটের মতো। যে যাই করুক, বলতে হয়, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। আমারও অনুপ্রেরণা লাগে। অর্থাৎ, হোম মিনিস্টারের ছাড়পত্র লাগবে। তিনি একবার হ্যাঁ বললে নিশ্চিন্তে এগোনো যায়। অগত্যা, তাকে ছবিগুলো দেখানো হল। একটা কিন্তু কিন্তু ছিল। কিন্তু শেষমেশ তিনি সম্মতি দিলেন।
অতএব, চলো পানসি বেলঘরিয়া। সরি, তাবাকোশি।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, এসব ফিরিস্তি বেশি না বাড়ানোই ভাল। সোজা কথা জেনে রাখুন, মিরিক থেকে মাত্র আট কিলোমিটার। এবার আপনি বিমানে যাবেন না ট্রেনে যাবেন, নিজে বুঝে নিন। সোজা এনজেপি থেকে গাড়ি নেবেন নাকি মিরিক পর্যন্ত শেয়ারে গিয়ে তারপর বাকি পথটুকুর জন্য গাড়ি নেবেন, সেটাও আপনি বুঝে নিন।
কী আছে? কী নেই? নেইয়ের দু একটা কথা বলে নেওয়া যাক। শপিং মল নেই। ঝাঁ চকচকে রেস্তোরাঁ নেই। সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখার লোকও নেই। ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রামের ছবি যেমন হওয়ার কথা, তেমনিই। প্রকৃতির মাঝে দুটো দিন হারিয়ে যাওয়া। আমাদের রাজ্যে টি ট্যুরিজম সেভাবে গড়ে ওঠেনি। চাইলে জঙ্গলে থাকতে পারেন। পাহাড়ে থাকতে পারেন। কিন্তু চা বাগান মানে গাড়ি থামিয়ে দু একটা সেলফি তোলা। ব্যাস, এখানেই শেষ। বাগানের মাঝে সরু রাস্তা দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়া, হাত ধরে হারিয়ে যাওয়ার সেই সুযোগ কোথায়? একসঙ্গে যদি একটু পাহাড়, একটু ঠাণ্ডা, একটু নদী, একটু মেঘ আর মাইলের পর মাইল চা বাগান পাওয়া যায়, মন্দ কী? তাহলে চলে যান তাবাকোশি। সবজান্তা গুগলে গিয়ে ছবি দেখে নিতেই পারেন। হোম স্টে–র বিছানা কেমন, বাথরুম কেমন, এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। বিছানা, বাথরুম অনেক জায়গাতেই ঝাঁ চকচকে পাবেন। কিন্তু চাইলেই প্রকৃতির এমন নিবিড় সান্নিধ্য আর কোথায় পাবেন? দেরি না করে এই গরমেই একবার ঢুঁ মেরে আসুন। কোথায় থাকবেন? কত ভাড়া? প্রিয় পাঠক, তার বিজ্ঞাপন আমি নাই বা দিলাম। নেট খুলুন। গুগল বাবুকে জিজ্ঞেস করুন। সন্ধান পেয়ে যাবেন।
(বিভিন্ন অফবিট জায়গার সন্ধানে বেঙ্গল টাইমস। আপনিও যদি এমন কোনও অফবিট জায়গা থাকে ঘুরে আসেন, সেই অনুভূতি মেলে ধরুন বেঙ্গল টাইমসের পাঠকদের জন্য। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)
(লেখাটি গত বছর বেঙ্গল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল। লকডাউনে যেতে পারুন আর নাই পারুন, মনে মনে হারিয়ে যেতে তো বাধা নেই। তাই, লেখাটি আবার ফিরিয়ে আনা হল। )