সরল বিশ্বাস
এই রাজ্যে কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের তৃণমূল বিরোধী কজন আছেন? একটা নাম যদি হয় অধীর চৌধুরি, তবে দ্বিতীয় নামটা অবশ্যই দীপা দাশমুন্সি। বাকি অনেকের তৃণমূলে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু এই দুজনকে নিয়ে কখনই সেই গুঞ্জন ওঠে না। এটাও একধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা, যা অধীর ও দীপা অর্জন করেছেন।
কিন্তু সেই দীপাই এবার অদ্ভুত এক গোঁ ধরলেন। রায়গঞ্জ আসনটা তাঁকে ছাড়তে হবে। কিন্তু জোটের তো ন্যূনতম কিছু শর্ত থাকে। হ্যাঁ, দীপা গতবার বেশ ভালই লড়াই করেছিলেন। অল্পের জন্য হেরেছিলেন। অন্য সময় হলে, এই আসনটা ছাড়তে সিপিএম–ও কোনও দ্বিধা করত না। কিন্তু সিপিএমের বাধ্যবাধকতাও তো দীপাকে বুঝতে হবে। মাত্র দুটি জেতা আসন। সেই দল চাইবে না সেই আসন গুলি ধরে রাখতে? অল্পের জন্য হারার জন্য দীপার দাবি যদি জোরালো হয়, তাহলে অল্প ভোটে হলেও জেতা প্রার্থীর দাবি থাকবে না?
শেষ বিধানসভার কথা মনে করুন। সেখানে দীপা দাশমুন্সি চাইলে রায়গঞ্জ বা ইসলামপুর থেকে লড়তেই পারতেন। এমনকী, চোপড়া বা গোয়ালপোখর থেকেও অনায়াসেই জিততে পারতেন। এমনকী, অধীরকে বললে তিনি মুর্শিদাবাদের কোনও একটা নিরাপদ আসন ছেড়ে দিতেন। কিন্তু দীপা দাঁড়িয়েছিলেন খোদ ভবানীপুর থেকে। দীপা কি ভেবেছিলেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে দেবেন? নিশ্চয় ভাবেননি। তা সত্ত্বেও সাহস দেখিয়েছিলেন। এই সাহসকে স্যালুট জানাতেই হবে।
তখন নাকি সোনিয়া গান্ধী কথা দিয়েছিলেন, ভবানীপুরে হারলেও পরে রাজ্যসভার জন্য দীপার নাম বিবেচিত হবে। কিন্তু পরপর দুবার রাজ্যসভা ভোটের সময় দীপার নাম মনেই পড়ল না। দুবারই কংগ্রেস প্রার্থী করল এমন দুজনকে, যাঁদের প্রার্থী করলে মমতা রেগে যাবেন না। প্রদীপ ভট্টাচার্য সরাসরি মমতাকে ফোন করে আশীর্বাদ চেয়ে বসলেন। আর অভিষেক মনু সিংভির নাম তো কংগ্রেস ঘোষণা করার আগে মমতাই ঘোষণা করে দিলেন। সহজ কথা, কংগ্রেসই দীপাকে রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে চায়নি। কংগ্রেস দীপার নাম প্রস্তাব করলে বামেদের দিক থেকে কোনও আপত্তি আসত বলে মনে হয় না।
এবারও দীপার জন্য দুটো সম্মানজনক রফাসূত্র দেওয়া হয়েছিল। মালদা উত্তরে মৌসমের বিরুদ্ধে দীপাকে প্রার্থী করা যেতেই পারত। সেখানে বাম কর্মীরাও দীপাকে জেতাতে কোমর বেঁধেই নামতেন। বাম আর কং ভোট এক জায়গায় পড়লে দীপার জয়ের যথেষ্টই সম্ভাবনা ছিল। দুই, রাজ্যসভায় দীপাকে প্রার্থী করা হলে বামেরা সমর্থন করবে, এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুশকিলটা হল, এবারও কংগ্রেস কি তাঁকে প্রার্থী করত? মমতাকে চটানোর ঝুঁকি কি রাহুল নিতেন? বা যদি প্রার্থী করাও হয়, কজন কং বিধায়ক দীপাকে ভোট দিতেন? কারণ, তৃণমূলে নাম লেখানো বিধায়করা প্রদীপ ভট্টাচার্য বা অভিষেক মনু সিংভিকে ভোট দিয়েছেন মমতার নির্দেশে। বামেদের ৩৪ এর মধ্যে তিরিশ জনের ভোট হয়ত পেতেন। কিন্তু কংগ্রেসের ৪৪ এর মধ্যে ১২ টা ভোট পাওয়াও এই মুহূর্তে নিশ্চিত নয়।
দীপা বরং ভাবুন, কেন তাঁকে পরপর দুবার রাজ্যসভায় প্রার্থী করা হল না। দীপা বরং ভাবুন, এবারও রাজ্যসভায় কেন তাঁকে প্রার্থী করা হবে না। সহজ কথা, কংগ্রেস তাঁকেই প্রার্থী করবে, যাঁকে মমতা চাইবেন। এবারও মমতা তিনটি আসন ছাড়লে তাতেই রাজি হয়ে যেতেন রাহুল গান্ধী। মমতা ছাড়েননি, তাই বামেদের সঙ্গে জোটে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন। রাজ্য কংগ্রেসের কিছুই করার নেই। লাটাই যে দিল্লির হাতে। আর তাঁরা মমতাকে চটাতে চান না। এই সহজ সত্যিটা দীপা যদি বুঝতেন!