(কীভাবে কেটেছিল মাধ্যমিকের পরের তিন মাস? এই নিয়ে বেঙ্গল টাইমসের নতুন বিভাগ— মাধ্যমিকের পরে। পুরো মার্চ ও এপ্রিল মাস জুড়েই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরের দিনগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। ফেলে আসা দিনগুলোতে একটু উকি দেওয়া। )
জগবন্ধু চ্যাটার্জি
ছোটবেলা থেকেই পড়তাম, ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতা দিবস। যতবার পড়তাম, ততবারই মন খারাপ হত। আমরা কি সত্যিই স্বাধীন? রোজ স্কুলে যেতে হয়, টিউশনি যেতে হয়, বেশিক্ষণ খেলাধূলা করা যায় না। সাঁতার কাটা যায় না। সন্ধের আগেই বাড়ি ফিরতে হয়। যখনই টিভিতে খেলা দেখতাম, বাড়ির লোকজন বলত, সামনে পরীক্ষা, এখন টিভি দেখছিস? বড় হ, তারপর যতখুশি দেখবি।
এসব শুনতে শুনতেই বেড়ে ওঠা। যত দিন গেল, তত যেন চাপ বাড়তে লাগল। একটা টিউশনি থেকে দুটো হল। আরও নতুন নতুন সাবজেক্ট, মোটা মোটা বই। খেলার সময়, টিভি দেখার সময় যেন আরও কমে গেল। মনে হত, কবে মাধ্যমিকটা শেষ হবে। তারপর আমাকে পায় কে? নাইন থেকেই মনে হত, মাধ্যমিক শেষ হলে আমার স্বাধীনতা দিবস শুরু হবে। যেদিন মাধ্যমিক শেষ হবে, সেদিন হবে আমার স্বাধীনতা দিবস। পরীক্ষার সূচি ঘোষণা হল। লোকে জানতে চায়, পরীক্ষা কবে থেকে শুরু। আমি শুরুতেই জানতে চেয়েছিলাম, কবে শেষ। যতদূর মনে পড়ছে, শেষ দিনটা ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। আগের পরীক্ষাগুলো তেমন ভাল না হলেও অঙ্কটা বেশ ভালই হয়েছিল। ব্যাস, আমাকে আর পায় কে?
কিন্তু মুশকিলটা হল, ততদিনে প্রায় গরম পড়ে গেছে। ক্রিকেট খেলা বন্ধ। আমি খেলতে চাইলেই খেলব কার সঙ্গে। পাড়ায় অনেকের তখন সামনে উচ্চ মাধ্যমিক। কারও বা ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষা। কেউ আবার ক্লাস নাইন। তার বাড়ি থেকে ছাড়বে না। এদিকে, আমার পাড়ায় মাধ্যমিক দেওয়া বন্ধু তেমন নেই। কয়েকদিনের জন্য চলে গেলাম মামার বাড়ি। নদীতে ঝাঁপ দেব, সে উপায় নেই। কারণ, তখন এক হাঁটুও জল নেই। পুকুর শুকিয়ে গেছে। বর্ষা আসতে তখনও ঢের দেরি। কী যে করি! বাড়ি ফিরে এসে লাইব্রেরি যাওয়া শুরু করলাম। মনে হল, এই সুযোগে গল্পের বইগুলো পড়ে ফেলা যাক। আগে গল্পের বই পড়লে সবাই খুব বকাবকি করত। এবার নিশ্চয় বকবে না। কিন্তু কী পড়ব? ওই সময় গোয়েন্দা গল্পের দিকে ঝোঁকটাই বেশি ছিল। কাকাবাবু, ফেলুদা আগেই কিছু পড়া ছিল। বাকিগুলোও পড়ে ফেললাম। এবার হাত দিলাম সার্লোকহোমসে। ইংরাজি নয়, বাংলায়। সেটাও নিমেশে শেষ। হাত দিলাম শেকসপীয়ারে। সেগুলোও এক এক করে শেষ। এক স্যার বললেন, সে কী, বাংলা বইগুলো কবে পড়বি? একজন বলল, রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শুরু করতে। একটা বই তুললাম। শেষ করতে পারিনি। ভাল লাগেনি। বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা তুললাম। তাও মন ভরল না। বরং শরৎচন্দ্র ওই বয়সেই মনে কিছুটা দাগ কেটেছিল। আবার ফিরে এলাম সেই গোয়েন্দা গল্পে। দেখতে দেখতে কখন যে তিন মাস পেরিয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না। কোথাও যাওয়াও হল না। তবে ওই তিন মাস যা পড়েছিলাম, বাকি জীবনে এমন তিনমাস আর কখনও আসেনি। তাই একইসঙ্গে পড়ার বই থেকে মুক্তির তিন মাস। আবার গল্পের বইয়ে ডুবে যাওয়া তিন মাস। এভাবেই কেটেছিল আমার স্বাধীনতার দিনগুলো।
(বেঙ্গল টাইমসের ফিচার— মাধ্যমিকের পরে। কীভাবে কেটেছিল সেই তিনটে মাস। তা নিয়ে লিখতে পারেন আপনিও। পুরনো দিনগুলোকে একটু ফিরে দেখা। লেখা পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)