দল অনেকেই ছাড়েন। আদর্শের কথাও বলেন। কিন্তু সাংসদ বা বিধায়ক পদটা ছাড়তে বড়ই অনীহা। নানা কুযুক্তি দিয়ে সেটা ঠিক ধরে রাখেন। মিঠুন ব্যতিক্রম। মুকুল রায়ও সম্ভবত সাংসদ পদ ছাড়তে চলেছেন। ঋতব্রতরা যদি একটু শিখতেন! লিখেছেন রজন সেনগুপ্ত।।
দল ছাড়ার পরেই কেউ কেউ বেশি করে আদর্শবাদী হয়ে ওঠেন। বোঝানোর চেষ্টা করেন, আদর্শগত কারণেই তিনি দল ছাড়ছেন। কিন্তু দলের টিকিটে বিধায়ক বা সাংসদ পদটি ভুলেও ছাড়ার কথা ভাবেন না। ডান–বাম সব দলেই এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেকেই বাম বা কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গেছেন। যেতেই পারেন। কিন্তু তারপরেও তাঁরা নিজেদের পদটি বহাল রেখেছেন। অতি সম্প্রতি ঋতব্রত দল ছাড়লেন। দলের বিরুদ্ধে তাঁর প্রচুর ক্ষোভ। কিন্তু ভুলেও সাংসদ পদ ছাড়ার কথা ভাবছেন না। কারণ, এখনও তিন বছর সাংসদ থাকা যাবে। এই মোহ ছাড়া সত্যিই কঠিন।
কিন্তু কেউ কেউ সত্যিই নজির দেখিয়েছিলেন। খুব পুরনো উদাহরণ ঘেঁটে লাভ নেই । একজনের কথা মনে পড়ছে। অরুণাভ ঘোষ। ২০০১ এ তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত। কিন্তু নানা কারণে দলের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হল। সম্পর্ক আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগল। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অরুণাভ ঠিক করলেন দল ছাড়বেন। কিন্তু তার আগে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। যুক্তিটা পরিষ্কার, দলেই যখন থাকব না, তখন বিধায়ক পদ আঁকড়ে থাকব কেন? তাই আগে বিধায়ক পদটা ছাড়লাম।
কজন এই দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেন? কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়েও বহাল তবিয়তে বিধায়ক থেকে গিয়েছিলেন এমন তালিকা বেশ লম্বা। যাঁরা লোকসভার টিকিট পেয়েছিলেন, তাঁদের আইনগত কারণে পদত্যাগ করতেই হত। এমন দৃষ্টান্ত সৌমিত্র খাঁ, দশরথ তিরকি, সুনীল মণ্ডল। যাঁরা তৃণমূলে গিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন, তাঁদেরও উপনির্বাচনে লড়তেই হত। এমন দৃষ্টান্তও দুটি— কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি, হুমায়ুন কবীর (এর মধ্যে কৃষ্ণেন্দু জিতেছিলেন, হুমায়ুন হেরেছিলেন)। এছাড়াও আরও দুজন আছেন, যাঁরা পরে হলেও পদত্যাগ করেছিলেন। অনন্তদেব অধিকারী, অজয় দে। এছাড়া বাকিরা তৃণমূলে যোগ দিয়েও দিব্যি বিধায়ক থেকে গেছেন। সেই তালিকার কিছু উল্লেখযোগ্য নাম — উদয়ন গুহ, অসিত মাল, রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি, তুষার ভট্টাচার্য, দীপালি বিশ্বাস, শম্পা দরিপা, মানস ভুঁইয়া।
প্রশ্ন হল, মুকুল রায় কি সাংসদ পদ ছাড়বেন? চাইলে এটা–সেটা বলে আরও কয়েক মাস সচ্ছন্দে কাটিয়ে দিতেই পারেন। ভেতরে তৃণমূল, বাইরে অন্যকিছু, এমন কানামাছি খেলতেই পারেন। কিন্তু একটা কথা শুনে ভাল লাগল, তিনি নাকি পুজোর পরেই সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দিচ্ছেন। মুকুল রায় কোন দল করবেন, তা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। কিন্তু তিনি যদি সত্যিই সাংসদ পদ ছেড়ে দেন, তাহলে অন্তত আমার কাছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা একটু হলেও বাড়বে। আর্থিক সততাই শেষ কথা নয়। রাজনৈতিক সততার আলাদা একটা মূল্য আছে। গত বছর এই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। কবীর সুমন বা কুণাল ঘোষরা যা পারেননি, সেটাই পারেন মিঠুন চক্রবর্তী, মুকুল রায়রা। মূল্যবোধ যখন হারিয়ে যাচ্ছে, তখন মুকুলের পদত্যাগ একটা দৃষ্টান্ত হতেই পারে। যে দলে থাকছি না, সেই দলের সাংসদ পদ কেন আঁকড়ে থাকব? ঋতব্রতরা মুকুল রায়ের কাছ থেকে যদি এই শিক্ষাটুকু পেতেন!