তোর্সা চ্যাটার্জি
পূর্ণিমা রাতে তাজমহল দেখেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু পূর্ণিমা রাতে জব্বলপুরে মার্বেল রক দেখেছেন কি? তাজমহল হল মানুষের হাতে তৈরি শ্বেতপাথরের স্থাপত্য। আর মার্বেল রক হল প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি শ্বেতপাথরের স্থাপত্য। তাজমহলের পিছনে আছে যমুনা। আর মার্বেল রক নর্মদার বুকে অর্ধনিমজ্জিত। পূর্ণিমা রাতে সেই জলে যদি নৌকা বিহার করেন, তা হলে মনে হবে…। না আমি কিছু বলব না। নিজেই গিয়ে দেখে আসুন কি মনে হয়।
এখন নিরাপত্তার কথা ভেবে কেবল পূর্ণিমাতেই রাতে নৌকা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু যারা পূর্ণিমার দিনটা মিস করবেন, তারা কি রাতের মার্বেল রক দেখতে পাবেন না? নিশ্চয়ই পাবেন। তবে দূর থেকে। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের মোটেল মার্বেল রকস থেকে নর্মদার বুকে শ্বেতপাথরের পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। যে দৃশ্য দেখা যায় না আর কোনও হোটেল থেকে।
জব্বলপুর শহর হিসাবে বেশ ব্যস্ত। অনেকটা আমাদের বড়বাজারের মতো। তাই মুল শহরে না থেকে ভেরাঘাটের কাছে মোটেল মার্বেল রকসে থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি, শহরের হট্টগোলকেও এড়ানো যায়। সকালে উঠেই একদফা নৌকাবিহার করে নিন নর্মদার জলে। নামেই শ্বেতপাথর। কিন্তু সেই পাথরের রং যে এত রকমের হতে পারে তা জানা ছিল না। হলদে, গোলাপি, নীলচে, বাদামি, সবজেটে। ডুবো পাহাড়ের গা ঘেঁষে অলিগলির মতো এঁকেবেঁকে চলেছে নদী। পাহাড় দেখে কখনও মনে হয় দুর্গের দেওয়াল, কখনও মনে হয় উলটে পড়া গাড়ি। এই পাথরের ফাঁকে ফাঁকে নীল ডানার সোয়ালো পাখিরা বাসা বাঁধে। আর পাথরের উপরে বসে থাকে কিশোরের দল। সামান্য টাকার বিনিময়ে তারা নর্মদার জলে লাফ দিয়ে কেরামতি দেখায়।
নৌকা বিহার শেষ করে মোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিন। বিকেলে চলে যান। ধুয়াধর জল্প্রপাত দেখতে। নর্মদা এখানে পাগলি মেয়ের মত হঠাৎ শূন্য থেকে ঝাপ দিয়ে পড়েছে। নীচ থেকে ধোঁয়ার মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে জলকণা। কাছে গিয়ে দেখবেন তো বটেই। রোপওয়ের মজাটাও ছাড়বেন না। পাখির চোখ নিয়ে উপর থেকে দেখুন ধুয়াধরের তাণ্ডব। তবে সাবধান ভেজা মার্বেলে পা হড়কে না যায়।
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। ভেরাঘাটে বসে কিছুক্ষন নর্মদার আরতি দেখুন। আর তারপর জ্যোৎস্নার আলোয় মাখামাখি জলে ভাসিয়ে দিন নৌকা। কী দেখবেন?
কী করে বলব বলুন তো! সব কিছু কি বলে বোঝানো যায়? দিনের বেলায় যে জিনিস দেখে চোখ ফেরানো যায় যায় না, পূর্ণিমার রাতে সে জিনিস যে কেমন ধারা হয়! যান না নিজেই গিয়ে দেখে আসুন। মোটেল মার্বেল রকসে ঘর বুক করলেই তো হয়।