হেমন্ত রায়
দেখতে দেখতে যেন ৩২ বছর কেটে গেল। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন। মহম্মদ শামির হ্যাটট্রিক যেন মনে করিয়ে দিল চেতন শর্মাকে।
আমাদের তখন শৈশব। একটু েকটু করে বুঝতে শিখেছি ক্রিকেট। আমরা কেউ গাভাসকারের ভক্ত, কেউ বা কপিলের। আমি অবশ্যই গাভাসকারের। টেস্টে গাভাসকার মানেই এক নির্ভরতা। কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে বন্ধুদের কাছে খুব আওয়াজ শুনতে হত। কারণ, তখনও পর্যন্ত ওয়ানডে তে গাভাসকারের কোনও সেঞ্চুরি ছিল না। আমার কাছে নাগপুরের ওই ম্যাচটা স্মরণীয়। কারণ, ওই ম্যাচেই একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেছিলেন গাভাসকার। যতদূর মনে পড়ে, গ্রুপ লিগে সেটাই ছিল ভারতের শেষ ম্যাচ। সেমিফািনালে যাওয়ার ছাড়পত্র আগেই এসে গেছে। তবু জিতলে গ্রুপের এক নম্বর হওয়ার হাতছাড়ি।
সকাল থেকেই সেদিন টিভির সামনে। স্কুল ছুটি ছিল নাকি কামাই করেছিলাম, এতদিন পর আর মনে নেই। ভারতের ম্যাচ থাকলে স্কুল যাব না, এটাই মোটামুটি রুটিন ছিল। কেন জানি না, বাড়ির লোকেরাও এই রুটিন মেনেই নিয়েছিল। সেদিন ভারতের ফিল্ডিং। কপিলদেব, মনোজ প্রভাকর তো ছিলেনই। তিন নম্বরে বোলিং করতে আসতেন চেতন শর্মা। দাড়িওয়ালা এই ছটপটে বোলারটি অনেক রান দিতেন ঠিকই, কিন্তু উইকেটও নিতেন। তাঁর ছটপটানিটা ভালই লাগত।
কেন রাদারফোর্ড উইকেটে জমে গেছেন। বেশ পেটাচ্ছেন। হঠাৎ চেতনের বলে বোল্ড। পরের বলেই বোল্ড ইয়ান স্মিথ। তার আগে জালালুদ্দিন বা ব্রুস রিডরা হ্যাটট্রিক করলেও কোনও হ্যাটট্রিক সরাসরি দেখিনি। আর বিশ্বকাপে তো হ্যাটট্রিকই ছিল না। তাই আমাদের মধ্যে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ। হ্যাটট্রিক হবে তো। হয়েছিল। সেই কারণেই ইয়ান চ্যাটফিল্ডের নামটা আজও মনে আছে। তিনিই ছিলেন চেতনের তৃতীয় শিকার। হ্যাটট্রিক হতেই আমরা সবাই লাফিয়ে উঠলাম। নিজের চোখে এই প্রথম হ্যাটট্রিক দেখছি। তার ওপর ভারতীয়। তার ওপর বিশ্বকাপ বলে কথা।
এর পর ভারতের ব্যাটিং। শুরু থেকেই শ্রীকান্ত আর গাভাসকারের ঝড়। গাভাসকারকে এমন ঝড় তুলতে কোনওদিনই দেখিনি। সেদিন চ্যাটফিল্ডকে কী প্যাদানোটাই না পেঁদিয়েছিলেন। এখানেও বেচারা ট্র্যাজিক হিরো সেই চ্যাটফিল্ড। শ্রীকান্ত আউট হতেই নামলেন আজহারউদ্দিন।বাকিটুকু ছিল নিছক সময়ের অপেক্ষা। সেই ম্যাচে একজন নয়, দুজনকে দেওয়া হয়েছিল ম্যান অফ দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি। একজন চেতন, অন্যজন গাভাসকার।
মহম্মদ সামির হ্যাটট্রিক আবার যেন সেই দিনটা মনে করিয়ে দিয়ে গেল।