মিল্লার সার্টিফিকেট, কী জানি বাবলুদার মনে আছে কিনা

সেটাই ছিল সুব্রত ভট্টাচার্যর শেষ বছর। ১৭ বছর খেলা হয়ে গেছে। রজার মিল্লার কাছে প্রশ্ন এল, সুব্রতকে কেমন দেখলেন?‌ বেচারা মিল্লা!‌ বেমালুম বলে দিলেন, প্রমিশিং, ব্রাইট ফিউচার। এমনই স্মৃতি তুলে আনলেন রজত বসু।

সেবার বড় আঘাত দিয়েছিল ক্যামেরুন। প্রথম ম্যাচেই কিনা আর্জেটিনাকে হারিয়ে দিল!‌ বেশ মনে আছে, ফ্রাঁসোয়া ওয়াম বিউইককে। সেই ক্যামেরুন কিনা কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছিল। কী করে ভুলব রজার মিল্লার সেই কোমর দোলানো নাচ। যতদূর মনে পড়ে, দুটো ম্যাচে এক জোড়া করে গোল করেছিলেন। তখনই তাঁর বয়স ছিল ৩৮। বুড়ো হাড়ের চমক বলতে যা বোঝায়, তাই।

milla
গোল করেই অদ্ভুত ভঙ্গিমায় ছুটে যেতেন কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে। কোমর দুলিয়ে যে ভারি অদ্ভুত এক নাচ। পরে কত লোক যে তার অনুকরণ করেছিল!‌ মনে আছে, কলম্বিয়ার সেই পাগলাটে গোলকিপার হিগুয়েতাকে। বল নিয়ে মাঝে মাঝেই চলে যেতেন সেন্টার লাইনের দিকে। গোল ছেড়ে এভাবে কোনও গোলকিপারকে বেরিয়ে যেতে দেখিনি। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধেও তেমনটাই করতে গিয়েছিলেন। দুবারই বোক বনে গিয়েছিলেন মিল্লার কাছে।

milla2
সেই রজার মিল্লা সেবার আমাদের মন জিতে নিয়েছিলেন। সম্ভবত সেই বছরই মোহনবাগানের আমন্ত্রনে কলকাতায় খেলতে এসেছিলেন মিল্লা। ক্যামেরুন দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিল্লা। মোহনবাগানের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচ হয়েছিল। তখন খুব ছোট। তবু মিল্লার আকর্ষণেই পাড়ার দাদাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম ম্যাচটা দেখতে।
একটা ভারি মজার ঘটনা। সেটাই বোধ হয় সুব্রত ভট্টাচার্যের শেষ বছর। অবসরের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকা সুব্রতকে ঘিরে বাগান সমর্থকদের আবেগই ছিল অন্যরকম। সবাই যেন বাবলুদা বলতে অজ্ঞান। মিডিয়াও বেশ মেতেছিল সুব্রতকে ঘিরে। যতদূর মনে পড়ে খেলা শেষ হওয়ার পর রজার মিল্লার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সুব্রত ভট্টাচার্যকে কেমন দেখলেন?‌ বেচারা রজার মিল্লা!‌ সুব্রত কত বছর মোহনবাগানে খেলছেন, জানতে তাঁর বয়েই গেছে। ভেবেছিলেন, কোনও জুনিয়র প্লেয়ার সম্পর্কে হয়ত জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। ভিনদেশে গিয়ে এমন প্রশ্ন এলে যা উত্তর দিতে হয়, তাই দিলেন। বলে দিলেন— প্রমিসিং। ব্রাইট ফিউচার।
হায় রে!‌ সতেরো বছর মোহনবাগানে খেলার পর সুব্রত ভট্টাচার্যকে কিনা শুনতে হল, ব্রাইট ফিউচার!‌ কী জানি, বাবলুদার সেসব মনে আছে কিনা!‌

(কলকাতা ফুটবলের অনেক মজার ঘটনা। আস্তে আস্তে হারিয়েই যাচ্ছে। এমনই কিছু ঘটনা উঠে আসবে বেঙ্গল টাইমসে। মূলত শনি ও রবিবার এই জাতীয় লেখাগুলি প্রকাশিত হবে।কখনও সমকালীন কোনও প্রসঙ্গ টেনে। আবার কখনও প্রসঙ্গ ছাড়াই। চাইলে পাঠকরাও নানা স্মৃতি ও মজার ঘটনা তুলে ধরতে পারেন। নির্বাচিত হলে সেইসব লেখাও প্রকাশিত হবে।) 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.