আপনিও সেই হাড্ডিহীন চাড্ডির দলেই

নন্দ ঘোষ

(ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ সমীপেষু)

ডিয়ার ময়ূখ,
ক্যামেরার সামনে চেল্লামেল্লি করে বাড়ি ফিরলেন, ফেরার পথে এসি গাড়িতে বসে ফেসবুকে প্রাত্যহিক মলত্যাগ করা সমাপ্ত হয়েছে নিশ্চয়ই। হাত ধুয়েছেন? মল লেগে ছিল থুড়ি কাতলার কালিয়া লেগে ছিল? বিবাহের ভোজসভার কাতলা কালিয়া? মুর্শিদাবাদ যখন জ্বলছিল, চাকরিহারা শিক্ষকরা যখন রাস্তায় ছিল, তখন যে নেতারা বিয়ে করছিল, সেই নেতাদের বিয়ের ভোজের কালিয়া? যে সাংবাদিকরা ৩৬পাটি আল আউট করে সেই বিয়ের খবর করেছে, তাদের কলমে, ক্যামেরায় লেগেছিল কাতলার কালিয়া?

প্রশ্ন করছেন ব্রিগেডে আসা জনতাকে। প্রশ্ন করার অধিকার আছে আপনার? যোগ্যতা আছে? একটাও উচিত প্রশ্ন করতে পারবেন আপনি? একটা প্রশ্ন যে প্রশ্ন রাসভের মতো চিল্লিয়ে করতে হয় না, ঘাতকের মতো নিঃশব্দে করতে হয়, যে প্রশ্ন শুনে শাসক মাথা নিচু করে পালানোর রাস্তা খোঁজে? হ্যাঁ ময়ূখ, প্রশ্ন শাসককেই করতে হয়, রাজ্যের শাসককে এবং কেন্দ্রের শাসককে। শূন্য আসন পাওয়া, ১০ শতাংশের কম ভোট পাওয়া দলের যুবনেত্রীকে প্রশ্ন করে আইটি সেলের ভাইরা।

সাংবাদিক হয়ে, বাবুল সুপ্রিয়কে প্রশ্ন করতে পারবেন, আসানসোলে দাঙ্গা কারা করেছিল, কেন করেছিল? অর্জুন সিংকে প্রশ্ন করতে পারবেন, বিজেপি কর্মীদের দিকে বাপ–‌মা তুলে খিস্তি দিতে দিতে তেড়ে গিয়েছিল কে? শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করতে পারবেন, কংগ্রসের দল ভেঙে মুর্শিদাবাদ–‌মালদায় তৃণমূলের মৌরসিপাট্টা কে স্থাপন করেছিল? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারবেন, কয়লা, বালি, গরু, চাকরি হরেক চুরির তদন্ত কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে? আর জি করে, সন্দেশখালিতে কেন্দ্রের ঘাগু গোয়েন্দারা কী কেশ কর্তন করলেন? শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে পারবেন, নারদার ঘুষখোররা কবে ধরা পড়বে? দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করতে পারবেন, রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে কেন গিয়েছিলেন ইডেনে খেলা দেখতে?

অ্যাঁ! কী বললেন!! শুনতে পেলাম না! সাংবাদিকদের নিজ নিজ হাউসের পলিসি মেনে কাজ করতে হয়? ও মানে ফেসবুকে মন কি মলত্যাগ বলতে নেমেছেন? চাকুরি বজায় রাখার জন্য স্টুডিওতে চেঁচানো যথেষ্ট নয় ফেসবুকেও মলত্যাগ করতে হয়? মালিকের খুশি করতে হয়? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিজেপির, সি বি আই পরিচালনা করে বিজেপি, অথচ সি পি এমকে গালাগাল দিয়ে দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে তৃণমূলকে কতটা সুবিধা করে দিলে কতটা মলত্যাগ করলে নরেন ও গোঁসাই খুশি হয়?

এই যে এত মানুষ। প্রতিবার ব্রিগেড আসে। তারা ভোটের সময় সিপিএমকে ভোট দেয় এটা জেনে যে তাদের দলের কেউ চাকরি চুরির দায়ে জেলে যায়নি, কাউকে দেখা যায়নি অন ক্যামেরা ঘুষ খেতে। তারা জানে যে তাদের কোনও নেতা জেলযাত্রা থেকে বাঁচার জন্য অন্য দল থেকে সিপিএমে আসেনি।

তারা ভোট দেওয়া সত্ত্বেও সি পি এম সরকার গঠন দূর, একটা আসনও পায় না, কারণ ময়ূখ, আপনার মতো সাংবাদিকরা, আপনার মতো আই টি সেলের ভাইরা, সব অন্যায়ের দায় তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে আসল অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেন এবং শাসককে প্রশ্ন না করে মীনাক্ষীকে প্রশ্ন করেন।

পারলে ন্যাকামো ছেড়ে দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করুন, মুর্শিদাবাদে দাঙ্গার সময় আপনার লাঠি কোথায় ঘুরছিল? কোথায় বাইক চালাচ্ছিলেন? শুভেন্দুকে প্রশ্ন করুন, কংগ্রেসের হাতে থাকা পঞ্চায়েত ভাঙিয়ে কাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আপনি? প্রশ্ন করুন সিদ্দিকুল্লার সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে কেন তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন?

সর্বোপরি নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন ময়ূখ, আপনার বৌদ্ধিক গণিকাবৃত্তির চাপে যে বিবেক মেরুদণ্ডহীন কেন্নোর মতো গুটিয়ে গেছে, তাকে প্রশ্ন করুন, চাকরি বাঁচানোর তাড়নায়, মালিককে খুশি করার তাড়নায় আপনি কি আর সাংবাদিক আছেন নাকি আপনিও হাড্ডিহীন চাড্ডিতে পরিণত হয়েছেন?

 

Share