‌এই গাজোয়ারির সত্যিই কোনও দরকার ছিল!‌

বিপ্লব ঘোষাল

এবার পুর ভোটে কি বিজেপির ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনা ছিল?‌ অতিবড় বিজেপি সমর্থকও বোধ হয় এমনটা আশা করেননি। তবে কি বামেরা?‌ বাস্তবের মাটিতে যাঁদের পা রয়েছে, তাঁরা এটুকু দিব্যি জানতেন, যত ভাল ফলই হোক, দু’‌অঙ্ক অতিক্রম করবে না। যাঁরা চরম তৃণমূল বিরোধী, তাঁরাও নিশ্চিত করে জানতেন, তৃণমূল হাসতে খেলতে একশো পেরিয়ে যাবে। ধারেকাছেও থাকবে না অন্যান্য বিরোধীরা।

তারপরেও এমন গাজোয়ারি করতে হল কেন?‌ হ্যাঁ, যেটা করা হয়েছে, সেটাকে গাজোয়ারিই বলা যায়। মোটেই সব ওয়ার্ডে নয়। তবে বেশ কিছু ওয়ার্ডে। নিছক স্থানীয় কেউ অতি উৎসাহে কয়েকটা প্রক্সি দিল, ব্যাপারটা এমনও নয়। একেবারে দূরদূরান্ত থেকে ভাড়াটে বাহিনী আনতে হয়েছে। ফুটেজ থাকুক বা না থাকুক, মূলস্রোত মিডিয়া দেখাক বা না দেখাক, বিষয়টা জলের মতোই পরিষ্কার।

ভোটের আগেই যুবরাজ ভাইপো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘‌ভোটে কোনওরকম জবরদখল চলবে না। যারা গা জোয়ারি করবে, তাদের দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’ তা নিয়ে মিডিয়ার ধন্য ধন্য রব। তিনি নাকি পরিচ্ছন্ন ভোট চান। যিনি মাত্র ৫৭টা বুথে তিন লাখের লিড নিয়ে ভোটে জেতেন, তিনি নাকি পরিচ্ছন্ন ভোট চান। যাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশে একের পর এক জেলায় বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি, অন্তত সত্তর শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পারেননি, তিনি পরিচ্ছন্ন ভোটের ডাক দিলে তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?‌

বোঝাই গেল, নেত্রীর উন্নয়নেও আস্থা নেই। ভাইপোর পরিচ্ছন্ন ভোটের ডাককেও কেউ আমল দেন না। প্রার্থীরা জানেন, ওটা হেডলাইন হওয়ার জন্যই বলা। তাঁরা জানেন, জেতার জন্য কী করতে হয়। আসলে, অভ্যেস বড্ড খারাপ জিনিস। একবার গাজোয়ারির অভ্যেস রপ্ত হয়ে গেলে আর সুবোধ বালক হওয়ার উপায় নেই। এ হল বাঘের পিঠে চড়া। নামলেই বিপদ।

তাই বলে সবাই কি গা জোয়ারি করেই জিতলেন?‌ মোটেই তা নয়। অন্তত অর্ধেক আসনে মোটের ওপর পরিচ্ছন্ন ভোটই হয়েছে। ‌যেটুকু ধমচ–‌চমক হয়েছে, তাকে বিক্ষিপ্ত ঘটনাই বলা যায়। কিন্তু অনেক জায়গায় তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একেবারে সংগঠনিত ভাবেই লুঠপাট চলেছে। নইলে, একেক ওয়ার্ডে কেউ পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে জেতেন?‌ স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দাঁড়ালেও বোধ হয় আশি, নব্বই শতাংশ ভোট পেতেন না।

বিধানসভা ভোটে বিজেপির যেটুকু হাওয়া ছিল, তা একধাক্কায় অনেকটাই চুপসে গেছে। বামেদের অনুকূলে এখনও জনমত সেভাবে তৈরি হয়নি। তাই এখনই অন্য কিছুই হওয়ার ছিল না। তৃণমূলই জিতত। বেশ বড়সড়ভাবেই জিতত। কিন্তু নিজেদের ওপর ভরসা কেন যে এত কম?‌ যে জয় অনিবার্য ছিল, সেই জয় অর্জন করতেও এত কলঙ্ক কেন ডেকে আনতে হল!‌ ‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.