প্রসূন মিত্র
শ্যাম মুখার্জির এত জায়গায় জমি! ব্যাঙ্কের লকারে এত কেজি কেজি গয়না! পুলিশ নাকি বিস্মিত হয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই মাঝে মাঝে শিরোনামে উঠে আসছেন শ্যাম মুখার্জি। একসময় তৃণমূলের জেলা সভাপতি। রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী। দীর্ঘদিন বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান।
ভোটের আগে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। আশা ছিল, টিকিট পাবেন। কিন্তু হায়। বিজেপি ভরসা রাখল সদ্য তৃণমূল ছেড়ে আসা তন্ময় ঘোষের ওপর। সেই কীর্তিমান তন্ময় আবার জেতার পরেই সটান তৃণমূলের পতাকা ধরে নিলেন।
কিন্তু শ্যামবাবু যখন বিজেপির টিকিট পেলেন না, তিনি হাজির হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর সভায়। যদিও তেমন পাত্তা পাননি। মঞ্চে ওঠার সুযোগও পাননি। তাই তিনি তৃণমূল না তিনি বিজেপি, বলা মুশকিল।
ভোটের পর এবার তাঁর পেছনে পড়েছে বাঁকুড়ার পুলিশ। বিষ্ণুপুর পুসসভায় নাকি টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে! যেন বিরাট এক নতুন কথা শোনালেন! জেলায় এখন কী সমীকরণ চলছে, বলা মুশকিল। মোদ্দা কথা হল, শ্রীঘরে চালান করা হয় এক সময়ের দাপুটে তৃণমূল নেতাকে। কোটি কোটি টাকার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে। বিষ্ণুপুর শহরেই নামে–বেনামে অন্তত পঁচিশখানা জমির হদিশ। সঙ্গে ব্যাঙ্কের লকারে অন্তত কেজি তিনেক সোনার অলঙ্কার। আরও কত কী আছে, কে জানে!
প্রশ্ন হল, শ্যামবাবু যদি তৃণমূলেই থাকতেন, তাহলে কি পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আদৌ সক্রিয় হত? তাহলে কি তাঁকে গ্রেপ্তার করার হিম্মৎ দেখাতো? যেই তিনি বিজেপিতে গেলেন, অমনি তিনি খারাপ লোক হয়ে গেলেন। অমনি, তাঁর কেলেঙ্কারি খোঁজা শুরু হয়ে গেল! কই, যাঁরা তৃণমূলের বর্তমান চেয়ারম্যান, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে তো এমন তদন্ত হচ্ছে না।
তাছাড়া, শ্যামবাবু বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকে পুরসভার পদে নেই। প্রশাসক পদে অন্য বশংবদ কাউকে বসানো হয়েছে। তার মানে, যা যা দুর্নীতি, তৃণমূলে থাকতেই করেছেন। বছরের পর বছর করে গেছেন। এতদিন কেউ টের পাননি?
একজন প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার সাহস পুলিশের হবে? কোনও জেলার নেতার এমন নির্দেশ দিতে সাহস হবে? বিশেষ একজনের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ এতবড় পদক্ষেপ নিতে পারে? সেই বিশেষ একজন কেন এই বিশেষ একজনের প্রতি এমন নির্মম হলেন? কেন এমন বিশেষ নির্দেশ?
যে শ্যামবাবুর এত ভুরি ভুরি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে, তিনি তো বিশেষ একজনের ছবি টাঙিয়েই এতরকম অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। সেই বিশেষ একজন কী চমৎকারভাবে সব দায় ঝেড়ে ফেললেন! কী আশ্চর্য, এরপরেও তাঁর নামেই কিনা ধন্য ধন্য রব উঠছে।
জেলায় জেলায়, পুরসভায় পুরসভায় এমন কত শ্যাম লুকিয়ে আছেন, কে জানে!