উত্তম কুমারকে বড় করতে গিয়ে আমরা অহেতুক বাকিদের ছোট করে ফেলি। ভুলে যাই সেই সময়টাকে। প্রত্যেকেই যেন একেকজন দিকপাল। কাকে ছেড়ে কার কথা বলবেন? অথচ, সেই মানুষগুলো উত্তমের আড়ালেই থেকে যান। সেই পরিমণ্ডলে কারা ছিলেন? তুলে আনলেন সরল বিশ্বাস।
বাঙালি না বুঝেই কিছু বিষয়কে ভালবেসে ফেলে। সেই সম্পর্কে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি কোনওকিছুই বুঝতে চায় না। এবং তাঁকে বড় করতে গিযে বাকিদের কী অবলীলায় ছোট করতে পারে।
যেমন ধরা যাক নেতাজি। গড়পড়তা বাঙালি নেতাজি সম্পর্কে কতটুকু পড়েছে, কতটুকু জেনেছে, তা কথা শুনলেই বোঝা যায়। অথচ, কথায় কথায় নেতাজিকে টেনে আনে, আর গান্ধী–নেহরুসহ সবাইকে অহেতুক ছোট করে।
তেমনই এক উদাহরণ দেওয়া যায়। উত্তম কুমার। বাঙালি তাঁকে বড় করতে গিয়ে তাঁর সমসাময়িক চলচ্চিত্র জগৎকে অহেতুক ছোট করে বা উপেক্ষা করে। পুরানো মানুষদের অনেককেই বলতে শুনি, উত্তম কুমার নেই, কার সিনেমা দেখব? মনে হয়, উত্তম কুমার একাই যেন চলচ্চিত্র জগৎকে টেনে নিয়ে যেতেন। যেন বাকিদের কোনও ভূমিকাই ছিল না।
উত্তম কুমারকে এতটুকুও ছোট করছি না। কিন্তু তাঁর সমসাময়িকদের একবার দেখুন। উত্তম কুমার কাদের পাশে পেয়েছেন, ভাল করে ভেবে দেখুন। প্রথমেই আসা যাক নায়িকাদের প্রসঙ্গে। সুচিত্রা তো ছিলেনই। বাকিরা কারা? সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অঞ্জনা ভৌমিক, অরুন্ধতী দেবী, সুমিত্রা মুখার্জি।
বয়স্ক চরিত্রে কারা ছিলেন? ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, কমল মিত্র, বিকাশ রায়, ছায়া দেবী, কানন দেবী, সন্ধ্যারানী। সহ অভিনেতা বা সহ নায়কদের কথা ভাবুন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরি, বিশ্বজিৎ, রঞ্জিত মল্লিক, মিঠুন চক্রবর্তী। কমেডিয়ান হিসেবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী, তরুণ কুমার, অনুপ কুমার, রবি ঘোষ।
পরিচালক কারা? দীনেন গুপ্ত, অজয় কর, সত্যজিৎ রায়, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, তপন সিনহা। গানের জগতের দিকে তাকানো যাক। গান লিখছেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন, শ্যামল গুপ্ত, মুকুল দত্তরা। সুর দিচ্ছেন নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত মুখার্জি, সলিল চৌধুরি, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কমল দাশগুপ্ত, সুধীন দাশগুপ্ত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্ররা। আক কণ্ঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমার, ভুপেন হাজারিকা।
তাহলেই ভেবে দেখুন, কাদের পাশে পেয়েছিলেন মহানায়ক। হ্যাঁ, সবাইকে পাশে পেয়েছিলেন বলেই তাঁর পক্ষে মহানায়ক হয়ে ওঠা সহজ হয়েছে। একেকজন একক দক্ষতায় একটা ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারতেন। ভানু একাই কত ছবিকে টেনে নিয়ে গেছেন, একবার ভাবুন। জলসাঘর বা দাদা ঠাকুরের কথা মনে করুন। ছবি বিশ্বাস একাই টেনে নিযে গেছেন। গল্প হলেও সত্যি নিশ্চয় দেখেছেন। রবি ঘোষের কথা মনে করুন। অর্থাৎ, প্রত্যেকেই নিজের নিজের জায়গায় উজ্জ্বল। উত্তম কুমারকে বড় করতে গিয়ে এই সময়টাকে ছোট করবেন না।
*****
বেঙ্গল টাইমসের মহানায়ক স্পেশাল।আস্ত ই–ম্যাগাজিন। রয়েছে নানা আঙ্গিকের ১৮ টি লেখা।
পড়তে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন। প্রচ্ছদের ছবিতেও ক্লিক করতে পারেন। তাহলেও পুরো ম্যাগাজিনটি খুলে যাবে।
https://www.bengaltimes.in/BengalTimes-MahanayakSpecial.pdf