ভার্চুয়ালের ভাল–‌মন্দ

অনেকেই ঘোরাফেরা করেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। চারপাশের লোকজন হয়ত বিরক্ত। নানা প্রশ্ন ধেয়ে আসে। কিন্তু তার পরেও সে কেন মগ্ন থাকে এই দুনিয়ায়?‌ তাই নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ। লিখেছেন দেবাশিস হালদার।।

অনেকেই জিজ্ঞেস করে “মোবাইলটা নিয়ে এত খুটখাট কী করিস/করো?” কারও প্রশ্ন অভিযোগের সুরেও ঝড়ে পড়ে। নিকটাত্মীয় যারা আর কী। তাদের এই উত্তরটা মুখোমুখি দেওয়া যায় না। তাই এই মুখবন্ধ। তাদের প্রশ্নের কারণটা যদ্দূর সম্ভব এইরকম হতে পারে; বাস্তব জগত ছেড়ে আমি বেশি বেশি করে ভার্চুয়াল (এর সঠিক বাংলাটা আমার জানা নেই। কারও সংগ্রহে থাকলে জানাবেন।) জগতের অধিবাসী হয়ে পড়ছি না তো? কিংবা হয় তো সংসার বিবাগী হয়ে যায় কি না। জিও প্রবেশ করে এই চিন্তাটা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভাবনাটার মধ্যে সত্যতা অনেক খানি আছে। এটা আজকের দিনে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিশেষত এই ভার্চুয়াল জগতটা আমাদের সমাজবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এটা সকলেই টের পাচ্ছি, কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারছি না। কয়েকশো থেকে হাজার বন্ধুত্ব এখানে তৈরি করছি ঠিকই; তাদের লাইক, কমেন্ট, পোষ্ট এর জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছি; ঘরের পাশের পরিচিত মানুষটির খবর নিতে সময় পাচ্ছি না। অথচ আমার রেশনটা কিংবা কোনদিন বাজারটা পাশের বাড়ির ছেলেটাই এনে দেয়, আমার অনুপস্থিতিতে গিন্নিকে হসপিটালে তারাই নিয়ে যায়। অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। এগুলো আমার কোনও ফেসবুক বন্ধুর দ্বারা সম্ভব নয়। তাদের সহৃদয় ইচ্ছা সত্ত্বেও।

facebook5

তবু এই জগতটার দরকার ছিল, আছে, থাকবে বলেই আমি মনে করি। মনের খোরাকটা এখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। মানসিকতার দিক থেকে সমান্তরাল বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতে পারছি। যে কথা নিজ স্ত্রীর সঙ্গে এতদিন শেয়ার করতে পারিনি আজ সে কথা তাদেরকে জানিয়ে মনটা হাল্কাবোধ করছি। শুধু কি তাই, যে সময়গুলো কে এতদিন কাজে লাগাতে পারিনি বা সেই সময়ে মনের গোপন কোনে উঁকি দেওয়া এক কলি গান বা কবিতা এলে সেগুলো তখনই হারিয়ে যেত। আজ তাদের লিপিবদ্ধ করতে পারছি, বন্ধুরাও সঙ্গে সঙ্গে জেনে যাচ্ছে, প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। এগুলো তো আগে সম্ভব ছিল না।
মোদ্দা কথাটা হল আপনি যত খুশি ভার্চুয়াল জগতে থাকুন, কিন্তু কখনোই এই বাস্তব জগতটাকে অস্বীকার করে নয়। ভার্চুয়াল জগতে আপনার ভালো লেখা বা ছবিতে যেমন আপনি শত শত লাইক ও কমেন্ট পাচ্ছেন তেমনি এই জগতেও শত শত মানুষের না হোক আত্মীয় ও প্রিয়জনদের, যাদের প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে পারেন সে টুকু চেষ্টা থাকলেই হল।

(সমাজের চলমান একটি বিতর্ক। আজও আছে, আগামীদিনেও থাকবে। ভার্চুয়াল এই দুনিয়া সম্পর্কে আপনার ভিন্নমত থাকতেই পারে। খোলা মনে তা লিখে জানাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ ‌bengaltimes.in@gmail.com )‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.