ওপেন ফোরাম
রাতুল বসু
একটা সাগরদিঘি নিয়ে এত বিচলিত হওয়ার কি সত্যিই দরকার ছিল? উপনির্বাচনে শাসকদল জেতে, এটাই দস্তুর। কিন্তু সাগরদিঘি যেন অন্য চিত্রনাট্য নিয়ে হাজির। কিন্তু একটা হারকে একটু খোলা মনে গ্রহণ করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? এমন আক্রমণ কি মুখ্যমন্ত্রীকে শোভা পায়!
খোদ নবান্নে বসে, সরকারি প্রেস কনফারেন্সের জায়গায় বসে তিনি লাগাতার রাজনৈতিক কথা বলে গেলেন। এমন সব কথা, যা ওই মঞ্চে বসে বলা যায় না। কিন্তু কোনটা কোথা বলতে হয়, আর কোনটা কোথায় বলতে নেই, এই ন্যূনতম জ্ঞানটা এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নেই। সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় অধীর চৌধুরির পরিবার নিয়ে এমন কটাক্ষ করতে গেলেন। কোনও দরকার ছিল? নিজেকে কোথায় নামালেন?
এতদিন বলা হচ্ছিল, বাম নাকি সব ভোট বিজেপিকে দিয়েছে। আরে বাবা, বিজেপিকে ভোট দিয়ে কেউ শূন্য হতে চায়! এখন বলা হচ্ছে, বিজেপি নাকি কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে। এক্ষেত্রেও সেই একই যুক্তি, কে কোথায় ভোট দেবে, সেটা কি বিজেপির নির্দেশে ঠিক হবে? সহজ কথা, বিধানসভার সময় তৃণমূল বিরোধী ভোটের বড় অংশ গিয়েছিল বিজেপির বাক্সে। এখন সেই হাওয়া নেই। নানা কারণে বিজেপির ওপর সেই বিশ্বাসের জায়গাটা টাল খেয়েছে। খুব সাধারণ নিয়মেই একটা অংশ বাম–কংগ্রেস জোটে ফিরে এসেছে। আবার দু’বছর আগে মুসলিম ভোট প্রায় একতরফা পড়েছিল তৃণমূলের বাক্সে। কারণ, তখন বিজেপির বিরুদ্ধে একটা ভীতি কাজ করেছিল। মুসলিমদের বড় একটা অংশের মনে হয়েছিল, তৃণমূলের ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে হবে। এখন সেই ভীতি নেই। এখন সরকার পরিবর্তনের আবহ নেই। তাই, অনেকটা খোলা মনে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। তাঁদের অনেকেই কংগ্রেসকে দিয়েছেন। সবমিলিয়েই কংগ্রেসের জয়।
আর বাম–কংগ্রেস জোট তো ঘোষিত অবস্থান। এটা অশুভ হতে যাবে কেন? তৃণমূল কারও সঙ্গে জোট করলে সেটা শুভ, আর বামেরা জোট করলে অশুভ, এটা আবার কী অদ্ভুত মানদণ্ড? সহজ কথা, নানা কারণে তৃণমূলের হার হয়েছে। হারের কারণ নিয়ে আত্মসমীক্ষা চলতেই পারে। কিন্তু এটাকে বেশি বড় করে দেখাতে গেলে আখেরে ক্ষতিটা তৃণমূলেরই, এই সহজ বিষয়টা কেন বুঝছেন না মুখ্যমন্ত্রী?
অন্যদিকে, বাম–কংগ্রেস শিবিরের কাছেও শিক্ষনীয় কিছু বিষয় থাকছে। তৃণমূল বিরোধী হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারলে, মানুষ ঠিক ফিরে আসবেন। এই সারসত্যটুকু বুঝলেই যথেষ্ট। এর বেশি বুঝতে গেলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।