যদি ফিরে আসতেন, কী কী হত! আগাম আঁচ করে লিখলেন ময়ূখ নস্কর।
জোর খবর! জোর খবর। ব্রেকিং নিউজ।
তিন দশকেরও বেশি সময় স্বেচ্ছা নির্বাসনে কাটানোর পর মহানায়িকা সুচিত্রা সেন আবার পর্দায় ফিরে আসছেন।
ওরে বাবা, ব্রেকিং বলে ব্রেকিং। নিউজের চোটে টিভির কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তাকা ভদ্রলোক সবে অফিস থেকে ফিরে লুঙ্গি পরছিলেন। খবর শুনে দু হাত তুলে এমন লাফিয়ে উঠলেন, যে লুঙ্গির গিঁট খুলে গেল। বুড়ি দিদিমা নাতিকে বললেন, তোর দাদু যেন জানতে না পারে। ওই মেয়েটার জন্য আমার সংসার ভাঙতে বসেছিল। থাকা–খাওয়ার কাজের মেয়ে কিছুতেই খবর দেখে না। তার যত আসক্তি সিরিয়ালে। কবে কী হবে, আগাম বলে দিতে পারে। সেও বৌদিকে বলল, আজ আর ইচ্ছেনদী দেখে কাজ নেই। খবরের চ্যানেলটাই চলুক।
এদিকে চ্যানেলে চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ বলছে, নতুন সিনেমার নাম হবে— কলি যুগের কেষ্ট রাধা। সুচিত্রা সেন দেবের দিদিমার ভূমিকায় অভিনয় করবেন। পারিবারিক ছবি। বিষয় দুই প্রজন্মের টানাপোড়েন। দিদিমা কপালে রসকলি কেটে ‘সে বিনে আর জানে না রে মন’ গায়। আর নাতি ডিস্কোতে চার হাত পা তুলে ভজ গৌরাঙ্গ বলে নাচে। অন্য চ্যানেল বলল, টলিউডের বিখ্যাত টুকলি পরিচালক ধুম সিনেমাটিকে বাংলায় রিমেক করবেন। মোটর বাইকের রেসে সোহমের কোমর জড়িয়ে হট প্যান্ট পরা সুচিত্রা সেন। কোথায় লাগে মল্লিকা শেরাওয়াত!
খবর ছেড়ে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতার ফুটবল মহল। সবার মনে পড়ছে সেই দৃশ্য। ফুটবল মাঠের ধারে কাম অন ক্লেটন, কাম অন ক্লেটন বলে চিৎকার করছেন সুচিত্রা। যাকে বলে চিয়ার লিডার। সবকটা বড় দল ভাবছে, তাঁকে সাম্মানিক সদস্যপদ দেবে। ইস্টবেঙ্গলের পাল্লা ভারী। কারণ, একে সুচিত্রা সেন বাঙাল। তায় তিনি সপ্তপদী সিনেমায় উত্তমের বিরোধী দলের সাপোর্টার ছিলেন। কে না জানে উত্তম কুমার মোহনবাগানের সাপোর্টার ছিলেন! তবে শোনা যাচ্ছে, শেষ লটে ইস্টবেঙ্গলকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে পারে টালিগঞ্জ অগ্রগামী। তাদের আশা, মহানায়িকা মাঠের পাশ থেকে চেঁচালে তারা আবার প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসবে। নাইট রাইডার্সই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? তাদের আবার কর্পোরেট ব্যাপার–স্যাপার। এই বয়সে চিয়ার লিডার মানাবে না, এটা তাঁরা বোঝেন। কিন্তু ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তো করাই যায়। অ্যাটলেটিকোর বাবুরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? মরা গাঙে যদি জোয়ার আনতে হয়, সুচিত্রার চেয়ে ভাল টেক্কা আর কে হতে পারেন?
অন্যদিকে হয়েছে আরেক কেলো। মানসিক হাসপাতাল থেকে রোগীরা আর বাড়ি ফিরতে চাইছে না। তাদের বক্তব্য, সুচিত্রা সেনকে এই হাসপাতালে নার্স হয়ে আসতে হবে। এবং তারা সুচিত্রা সেনকে কখনও বা ডার্লিং, কভু তুমি জননী গানটি গেয়ে শোনাবেন।
পরের দিন কাগজে দেখা গেল, মাওবাদিরা সুচিত্রা সেনকে খোলা চিঠি দিয়েছে। বলেছে, দেবী চৌধুরানী সিনেমায় আপনার মধ্যে যে সংগ্রামী নায়িকার ছবি দেখেছি, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আপনি যেমন পর্দার মহানায়িকা, আমাদেরও এক মহানায়িকা ছিলেন। তিনি সুচিত্রা মাহাত। তিনি সরকারি প্রলোভনে পা দিয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় আপনি যদি আমাদের দলে নাম লেখান, দিন বদল হবেই হবে। ইতি কমরেড ভবানী পাঠক।
মাওবাদিরা না হয় সন্ত্রাসবাদি। মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। সবাই চাইছে, সন্ধেবেলার টিভি বিতর্কে সুচিত্রা সেন তাদের হয়ে অংশ নিন। তিনি যদি ঘাড় বাঁকিয়ে আড়চোখে তাকান, তাহলে বিপক্ষ দলের ডাকসাইটে বক্তা খেই হারিয়ে ফেলবেই।
তখন আবার টিভির পর্দায় ব্রেকিং নিউজ। সুচিত্রা ফোন করে জানিয়েছেন, যে খবর শোনা যাচ্ছে, সবটাই ভুয়ো। আমি এখন রিয়া আর রাইমাকে বাংলা শেখাচ্ছি। এখন কেউ আমাকে ‘টাচ’ করবে না।