সুরঞ্জন দাশগুপ্ত
দার্জিলিং আমার খুবই প্রিয়। মাঝে মাঝেই চলে যাই। কতবার গেছি, এখন আর গুনি না। অন্তত বার তিরিশেক তো হবেই। তবে, ভিড়ের সময় কিছুটা বিরক্তই লাগে। মনে হয় ভিড় থেকে পালিয়ে এসে আরও ভিড়ের মধ্যে পড়লাম। মনে হয় যেন একডালিয়ার দুর্গাপুজোয় চলে এসেছি।
অনেক বাঙালিই কারণে অকারণে ভিড় করে এই দার্জিলিংয়ে। পর্যটকরা আসতেই পারেন। কিন্তু অধিকাংশ পর্যটককে দেখে মনে হয়, এঁরা দার্জিলিংয়ের আসল সৌন্দর্য কী, সেটা জানেনই না। গাড়িতে করে কয়েকটা স্পট ঘোরা আর ম্যালে শ খানেক সেলফি তোলাই যেন এঁদের একমাত্র কাজ।
মাঝরাত থেকে হোটেলে টেকা যায় না। কিচির মিচির। সবাই দল বেঁধে চলল টাইগার হিল। সারা জীবনে এরা নিজের বাড়ি থেকে কোনওদিন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখেনি, তাদের সূর্যোদয় দেখার আদিখ্যেতা দেখলে সত্যিই গা জ্বলে যাওয়ার মতোই অবস্থা। সূর্য কোনদিকে ওঠে আর কোনিকে অস্ত যায়, এটাও এরা বই পড়েই জেনেছে। নিজের চোখে দেখেছে কিনা সন্দেহ। এরাও সব ভিন করে টাইগার হিলে।
আমিও বেশ কয়েকবার টাইগার হিলে গেছি। এমন ভিড়, যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। সবাই ছবি তুলতেই ব্যস্ত। সূর্য উঠলেও সেদিকে তাকানোর সময় কোথায়? এত লোকজনের যাতায়াত, দু তিন কিলোমিটার হেঁটেই উঠতে হয়। অনেকে গাড়িতেই বসে থাকে। ওখানেই দু চারটে ছবি তুলে প্রমাণ করতে চায়, সেও টাইগার হিলে এসেছিল।
এই টাইগার হিলে উটকো লোকেদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করাটা সত্যিই খুব দরকার ছিল। ভোর বেলায় গাড়ি ছুটিয়ে এত লোক যাবে কেন? সিকিমে কি সবাই চাইলেই ছাঙ্গু বা নাথুলায় যেতে পারে? আগাম অনুমতি নিতে হয়। যত খুশি লোক উঠে গেলে জায়গাগুলো নষ্ট হতে বেশি সময় লাগবে না। তাই, টাইগার হিলে এই নিয়ন্ত্রণটা খুব জরুরি ছিল।
আর যদি টাইগার হিল যেতেই হয়, সবাইকেই কি ভোরবেলাতেই যেতে হবে? অন্য সময় বুঝি যাওয়া যায় না? আমি দিনের নানা সময়ে গিয়ে দেখেছি, একেক সময় তার চেহারা একেক রকম। দুপুরেও টাইগার হিল বেশ রোমাঞ্চকর। তাই, সকালে অল্পসংখ্যক লোককে অনুমতি দিয়ে বাকিদের দিনের অন্যান্য সময়ে দেওয়া হোক। তাতেই টাইগার হিলের মঙ্গল। দেরিতে হলেও সরকার একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাইব, এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার যেন পিছিয়ে না আসে।
(ওপেন ফোরাম। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। নানা মত এখানে উঠে আসে। মতামত সম্পূর্ণই লেখকের। চাইলে, আপনিও এ ব্যাপারে নিজের মতামত তুলে ধরতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)
****