অণু গল্প

তবে কি?

চন্দনা ব্যানার্জি

পাহাড়ের বাঁক ঘুরে নামতে নামতে ইন্দ্রাণী দেখতে পায় থোকা থোকা লাল, হলুদ ফুল ফুটে আছে ঝোপে, ঝোপে। মস্ত মস্ত ফার্নের পাতা ছুঁয়ে যাচ্ছে বাসের জানলা, অনেক নিচে পাথরে পাথরে ফেনা ছড়িয়ে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে খরস্রোতা শীর্ণ পাহাড়ি নদী।
অনেকটা রাস্তা, বেশ দুর্গমও। দেখতে দেখতে এসে যায় গন্তব্য, বাস দাঁড় করায় থিয়ামন, বাসের ড্রাইভার। বাস থেকে নেমে হোটেলের পথে যাবার সময় ইন্দ্রাণী দেখে মিরিক জায়গাটি বড়ই শান্ত আর সুন্দর, বেশ ঠান্ডাও। হাওয়ায় ধারালো শীত। ভাল করে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে চমক ভাঙলো রঙ্গনের ডাকে, “থামলে যে? চলো”, “হ্যাঁ, এই তো চলো ” বলে রঙ্গনের হাতটা ধরে ধীর পায়ে হোটেলের দিকে এগোয় ইন্দ্রাণী।

mirik2

অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল তার, এই প্রথম রঙ্গনের সাথে বাইরে বেড়াতে আসা।এটুকু মিথ্যের আশ্রয় না নিলে চার দেওয়ালের সাংসারিক অশান্তির মধ্যে থেকে দম বন্ধ হয়ে উঠছিল ইদানীং। রঙ্গনের সাথে তিন-চারটে দিন কাটানোটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া মনে হচ্ছিল ইন্দ্রাণী র। হোটেলের কাউন্টারে নাম ঠিকানা লেখার পরেই রিসেপশানিস্ট মেয়েটি জিগ্যেস করল “বুকিং স্লিপটা স্যর?” ” হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই তো” বলে রঙ্গন জামা, প্যান্টের পকেটে আতিপাতি করে খুঁজেও পাচ্ছিল না।”এটাও হারালে?” ইন্দ্রাণীর বিরক্তি সূচক উক্তি। “আরে না, না, কাল রাতে তো এই জামার পকেটেই রেখেছিলাম মনে হচ্ছে। কলকাতার ব্রাঞ্চে অগ্রিম টাকা দেওয়ার সময় ভদ্রলোক যখন স্লিপ টা দিলেন, নিলাম না আমি? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে রঙ্গনের মেয়েটি র কথায় চমক ভাঙলো, “ওকে স্যর, আমি কলকাতায় ফোন করে বুকিং নাম্বারটা জেনে নিচ্ছি “।আশ্বস্ত হল রঙ্গন।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অদ্ভুত একটা শিহরণ হচ্ছিল তার। এটা কীসের অনুভূতি? এতদিন পর ইন্দ্রাণী কে প্রথম নিজের করে পাওয়া র জন্য নাকি অঞ্জনাকে মিথ্যে বলার জন্য? ঠকায়নি তো রঙ্গন, না চাইতেই তো সব কিছুই অঞ্জনাকে দিয়েছে সে, কোনও চাহিদাই তো অপূর্ণ রাখেনি অঞ্জনার। এই মিথ্যেটা কি খুব অপরাধযোগ্য ? না-ই তো মনে হল তার। হোটেলের ঘরে ঢুকে রঙ্গন ইন্দ্রাণী কে দু হাতে ধরে নিজের দিকে টানতেই বলে উঠল ইন্দ্রাণী “আগে ফ্রেশ হয়ে নাও, যা ধকল গেছে সারাদিন”।

চারদিনের দিল্লীতে অফিস ট্যুরের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু গুছিয়ে দিয়েছে অঞ্জনা সুটকেসে। কর্তব্যে কোনওদিনই তার কোন ত্রুটি দেখতে পায়নি রঙ্গন। শেভিংকিটটা সুটকেস থেকে বের করে চেন খুলতেই চোখে পড়ল, “আরে—এই তো হোটেলের বুকিং স্লিপ টা—এখানে এলো কি করে?”
তবে কি?????????

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *