স্বরূপ গোস্বামী
একদল আছেন, ভাল সিনেমা দেখতে চান। তাঁরা সিরিয়াল দেখতে চান না।
একদল আছেন, যাঁরা নাটকের দর্শক। তাঁরা দু একটা ভিন্ন ধারার সিনেমা দেখলেও সিরিয়ালের পথ মাড়ান না।
আরো একটা বিরাট অংশ আছেন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যে মূলত সিরিয়ালে চোখ রাথেন। তাঁরা সারা জীবনে নাটক দেখেননি। সিনেমাতেও বিশেষ ভক্তি নেই।
এই তিন শ্রেণীর দর্শকের মিল হওয়া কঠিন। সিরিয়ালপন্থীদের দেখলে নাটকপন্থীরা নাট সিঁটকান। আবার নাটকপন্থীদের দেখে সিরিয়ালপন্থীরা বলেন, ‘আঁতেল’। কী আশ্চর্য, পীযূষ গাঙ্গুলি যেন তিন শ্রেণীরই বড় কাছের মানুষ। নাটকপ্রিয় মানুষ যেমন স্বজন হারালেন, তেমনি সিনেমা বা সিরিয়াল দেখা দর্শকের বুকের ভেতরেও অদ্ভুত এক শূন্যতা। রবিবাসরীয় সকাল যে এমন বিষণ্ণতা বয়ে আনবে, কে জানত!

জন্ম, বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। তারপর এপার বাংলায় চলে আসেন। আর্ট ও কমার্স দুটি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। প্রথমে চাকরি পান নবার্ডে। কিন্তু মাথায় ঘুরঘুর করছে অভিনয়। একসঙ্গে দুটোই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা সময় এসে মনে হল, দু নৌকায় পা দিয়ে থাকা যায় না। যে কোনও একটা পথ বেছে নিতে হবে। বেছে নিলেন অভিনয়কেই।
মূলত মঞ্চের অভিনয় দিয়েই জীবন শুরু। বছরের পর বছর স্মরণীয় সব নাটক উপহার দিয়ে গেছেন দর্শকদের। জ্যেষ্ঠ পুত্র, আকরিক, মাধব মালঞ্চি কইন্যা, জোছনা কুমারী, ভাইরাস এম, বাবলি, ১৭ জুলাই, মৃত্যু ঈশ্বর যৌনতা, ব্রেন, সিনেমার মতো, সুরান্ত, গ্যালিলিও গ্যালিলেই।
বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখার্জি, রমাপ্রসাদ বণিক, ব্রাত্য বসুসহ অনেক নাট্যকার ও পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন।

টিভির দুনিয়ায় দেখতে দেখতে দুই দশক হয়ে গেল। শুরু হয়েছিল ‘আবার যখের ধন’ দিয়ে। তারপর জন্মভূমি, সোনার হরিণ, মেঘের পালক, জলনুপুর, বয়েই গেল, চোখের তারা তুই, আঁচল- একের পর এক ধারাবাহিক তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বাঙালির অন্দরমহলে।
বড় পর্দাতেও রেখে গেছেন কৃতিত্বের ছাপ। ১৯৯৪ এ আমোদিনী দিয়ে শুরু। তারপর মাতৃভূমি। বাবা কেন চাকর, মহুলবণির সেরেং, ইতি শ্রীকান্ত, ম্যাডলি বাঙালি, অংশুমানের ছবি, ব্যোমকেশ বক্সি, অটোগ্রাফ, দশমী, আবার ব্যোমকেশ, ল্যাপটপ, আবর্ত, গয়নার বাক্স, উৎসবের রঙ, চার। ছবির তালিকা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, স্বপন সাহার ছবিতে যেমন আছেন, তেমনি অপর্ণা সেন, সৃজিত মুখার্জির ছবিতেও আছেন। বাণিজ্যেক ছবিতেও যেমন আছেন, তেমনি সমান্তরাল ধারার ছবিতেও আছেন। তবে সমান্তরাল ধারার ছবিতেই বেশি।
আরও একটা বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ছোট পর্দায় উত্তম কুমারের বিভিন্ন ছবি নিয়ে একটা সিরিজ হচ্ছিল- ‘আবার উত্তম’। সেখানে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির জন্য তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। পীযূষ হয়েছিলেন অ্যান্টনি কবিয়াল। উত্তম কুমার অভিনীত চরিত্রে কাজ করা মানে তুলনা অবধারিত। শুরুতে অনেকে নাট সিঁটকেছিলেন। কিন্তু অ্যাটনি কবিয়ালের চরিত্র দারুণভাবেই উতরে দিয়েছিলেন পীযূষ। গান গুলো নিজের গলায় গাওয়া।

এমন টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি ঘুরে বেড়াবে টলিউডে। কেউ মনে রাখবেন জলনুপুরের অমর্ত্যকে, কেউ মনে রাখবেন সেই অ্যান্টনি কবিয়ালকে। আবার কেউ মনে রাখবেন গ্যালিলিওকে।
চলে গেলেন, কিন্তু থেকেও গেলেন পীযূষ গাঙ্গুলি।।
