কেমন ছিলেন অতীত দিনের দিকপাল সেই সাংসদরা? কেন এতবছর পরেও তাঁদের আমরা মনে রাখি? এই নিয়ে বেঙ্গল টাইমসের বিশেষ সিরিজ। এবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি গীতা মুখার্জিকে। লিখেছেন ড. অরিন্দম অধিকারী।।
ঘাটাল কোনও অভিনেতা চায় না…
লড়াই এর সাথী চায়…
গোটা পাঁশকুড়া (অধুনা ঘাটাল) লোকসভা আজও তোমাকে পরতে পরতে অনুভব করে। ধামসা মাদল বাজাতে বাজাতে কাঁসাইয়ের বাঁধের লাল ধুলো উড়িয়ে দাসপুরের খুকুড়দহ স্কুল ময়দানে তোমার আগুনঝরা বক্তব্য শুনতে আসত পাঁশকুড়ার মাইশোরার মালতি হেমব্রম। শাসক ভয় পেয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে তোমাকে বন্দি করেছিল। কারণ কাস্তে ধানের শীষ মানেই তো তুমি। লক্ষ্মী দোলই গলার শিরা কালো করে বলত “ভোট দিন বাঁচতে.. ধান শীষ কাস্তে।’
রায় বাহাদুর উপাধি পাওয়া বাড়ির মেয়েটা কিনা শেষে কমিউনিস্ট পার্টির ভারত বিখ্যাত নেত্রী। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার নন্দনপুর বিধানসভার কেশাপাটের গোঁসাইবেড়ে যখন বাল্বের আলোয় চন্দ্রমল্লিকারা বেড়ে ওঠেনি, তখন বিদ্যুৎহীন গাঁয়ে চাঁদের আলোয় মল্লিকাদের বেড়ে ওঠার লড়াই সংসদে লড়ে গেছ তুমি। যে তরুণ মেদিনীপুর শহর থেকে সবং এর কাঁটাখালি বাসে চেপে বাড়ি ফিরত আর কাঁচের জানালা সরিয়ে মাদুর বুনতে থাকা কিশোরীর চোখে চোখ মেলাত, সেই মাদুর কাঠির করুণ গাথা তুমি সংসদে অণর্গল বলতে। যে অপরাজিতা তার নিজেরই হার্দিক নির্যাসের ভালবাসায় পিংলার নয়া গ্রামে পটের রঙে বর্ণিল হয়ে উঠত, তার লড়াই এর কথা তুমি আবেগঘন কণ্ঠে ঋজু হয়ে বলতে।
ডেবরার লোয়াদায় কাঁসাইয়ের ব্রিজ পেরিয়ে যে কুসুম বোরো ধান রুইয়ে শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে আজ ইতিহাসে অনার্স পড়তে যায়, তাদের মা বাবার জমির লড়াইয়ের সংগ্রামী আলপনা আঁকতে তুমি দিল্লির রাজপথে। কেশপুরের পারাং বিধৌত সমভূমির কোনও এক গাঁয়ের বধূদের চোখের জলে তুমি যেন রূপকথার রং হয়ে যেতে। দাসপুরের রূপনারায়ণের শ্রাবণের উত্তাল ঢেউয়ের মতো পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে তোমার জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ত। তুমিই ছিলে মহিলা সংরক্ষণ বিলের রূপকার। আজ অনেকেই নিজের নামে চালাতে চায়, কিন্তু গুজরাল মন্ত্রীসভার মন্ত্রিত্ব অবলীলায় ছেড়ে শুধু লড়ে গেলে নারী মুক্তির জন্য। অবহেলিত গরিব মানুষের নেত্রী ছিলে তুমি। সাত সাতবার জয়লাভ করে পাঁশকুড়ার সবচেয়ে বেশি দিনের সাংসদ তুমি।
জানি না গীতা পাঠে মুক্তি লাভ আছে কিনা! তবে গীতা মুখার্জির পাঠশালায় নারী তার মুক্তি দেখেছিল। জন্ম শতবর্ষে প্রণাম কমরেড গীতা মুখার্জি।